সহকর্মী
মাঠ ভেঙ্গে একরকম ছুটেই
আসছিল মিত্রা। বড় বড় পা ফেলে
ফেলে আসছিল
অফিস ঘরের
দিকে। কালকে
স্কুলের একটা
মিটিং আছে।
ঠিক স্টাফ
রুম থেকে
বেরোবার মুখে
বড়দি হাতে
ধরিয়ে দিলেন
কাগজটা। বড়দির
মুখের ওপর
না বলতে
পারেনি। এখন
এই কাগজটা
দিয়ে আসতে
হবে অফিসে,
বরুণবাবু কে।
বরুণবাবু তাদের
অনেক দিনের
পুরোনো কর্মী,
তাঁকেও ঠিক
ডেকে পাঠানো
যায় না।
বয়স্ক মানুষ।
অথচ, এখন
না বেরোলেই নয়। দিদিমণিরা প্রায় অনেকেই
বেরিয়া গেছেন।
ছুটির ঘন্টা
পড়েছে খানিক
আগেই। স্টাফরুমে বসে বসে
ক্লাস এইটের
ক্লাসটিচার শেফালিদির সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ে কথা
বলছিল মিত্রা। হাতে সময়
ছিল কিছুটা। হাত ঘড়িতে
বারবার ঘড়ি
দেখে ঠিক
সময়েই বেরিয়েছিল, কিন্তু বড়দির কাগজখানা দিতে গিয়েই
দেরী হয়ে
যাবে মনে হচ্ছে। এখুনি
না বেরোলে
বাড়ি ফেরার
বাস টা পাবে না মিত্রা। আর এই বাস
না পেলে
এখন ঝাড়া
একঘন্টা বাসস্টপে বসে থাকতে
হবে পরের বাসের
জন্য। খাঁ
খাঁ বাসস্টপে বসে থাকতে
কারই বা ভাল লাগে
!
পড়ি কি মরি করে
হাঁফাতে হাঁফাতে অফিসে এসে
দ্যাখে বরুণবাবু নেই। অন্য
একজন বসে
আছে, আগে
তাকে দেখেছে
বলে মনে
হল না,
নতুন লোক
হবেন, হয়ত
বরুণ বাবুর
জুনিয়র কেউ
হবেন। আসলে
স্কুলের দিদিমনি রা খুব
একটা অফিস-ঘরে আসেন
না, আসার
দরকারও হয় না। নোটিস যা দেখার থাকে
ওদের স্টাফরুমেই পাঠিয়ে দেওয়া
হয়। তাই
সকলকে চেনাও হয়ে
ওঠে না।
তাড়াহুড়ো করে কোনরকমে বুঝিয়ে
দিতে দিতে
দেখল ভদ্রলোক হাঁ করে
মুখের দিকে
তাকিয়ে আছেন।
এ কি অসভ্যতা! একজন
টিচার কথা
বলছেন, কিছু
বোঝাচ্ছেন, আর তুমি মুখের
দিকে হাঁ
করে তাকিয়ে
আছ ! মাথা গরম হয়ে গেল।
একে তো দেরি, তায়
আবার... অপ্রস্তুতেও পড়ল,
বিরক্তও হল মিত্রা। কাগজটা
হাতে ধরিয়ে
দিয়ে বাইরে বেরিয়ে
এল । এবার হাঁটা
লাগাতেই হবে,
নইলে এই বাসটা আর পাবে না।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে মেনগেটের কাছাকাছি আসতেই
পিছন থেকে
ডাক---শুনুন। ফিরল মিত্রা। সেই ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে হাতে
কাগজ নিয়ে।
মুখখানা হাসি হাসি করে
জিজ্ঞেস করলেন,
---কিন্তু কি করতে হবে,
কতগুলো কপি,
কোথায় জমা
দিতে হবে
কিছুই তো বলে গেলেন
না...
মুশকিলে পড়ল মিত্রা। মুখখানা কাঁচুমাচু করে
হাতঘড়ি দেখল।
তারপরএকটু গম্ভীর
হয়ে বলল,
---এসব কাজ তো আপনারই জানার
কথা, আমার
তো নয়।
না পারলে
বড়দিকে জিজ্ঞেস করে জেনে
নিন...’ আর দাঁড়ালো না। পরের
দিনও ভোগান্তি যে একটা আছে,
সেটা বুঝতে পারেনি
মিত্রা। যথারীতি স্কুলে এসে
প্রথম তিনটে
ক্লাস করার
পর ডাক
পড়ল হেডমিস্ট্রেসের ঘরে। লাবণ্যদি মানে স্কুলে
সংষ্কৃত পড়ান যিনি,
এসে বললেন----
যা, বড়দি
ডাকছেন অফিসে।
--কেন গো?
আলমারি থেকে খাতা , চক -ডাস্টার নিতে নিতে
লাবণ্যদি মাথা
নাড়লেন, জানেন
না। হঠাৎই
মনে পড়ল
কালকের ঘটনা
টা। ভয়ে
ভয়ে মুখ
শুকনো করে
উঠে দাঁড়াল
মিত্রা। শাড়ীর
কুঁচি ঠিক
করল, মাথার
চুলে একবার
হাত দিয়ে
ঠিক করে
নিল। পাশে
বসা অদিতিকে একবার বলল--কি ব্যাপার বলত?
অদিতি এইমাত্র বড়দির কাছ
থেকেই ফিরল।
আগামিকাল ছুটি
নেবে, তাই
দরখাস্ত জমা
দিয়ে এল।
ব্যাগ থেকে
একটা ছোট
জলের বোতল
বার করে
গলায় ঢালতে
ঢালতে বলল,---
বড়দির ঘরে
একজন নতুন
ফিজিক্সের স্যার
বসে আছেন
দেখলাম...দ্যাখগে, হয়ত ক্লাস এরেঞ্জমেন্টের ব্যাপার হবে...গিয়েই দ্যাখনা !
মিত্রা হাতব্যাগটা
একবার হাতে
নিয়েও আবার
বড় টেবিলে
রাখল। না,
ব্যাগ নিয়ে
যাবে না,
থাক এখানে। বেরোতে গিয়েও
আবার ফিরে
এসে ব্যাগটা টেবিল থেকে
তুলে নিয়ে
হাতে ঝোলাল।
অদিতি দেখে
হেসে ফেলল,--তুই কি রে, ছাত্রী
নাকি, এত ভয় পাচ্ছিস কেন? মিত্রাও হেসে ফেলল।
---যাই, ঘুরেই
আসি’ বলেই স্টাফরুম থেকে
বেরিয়ে গেল
বড়দির অফিসের
দিকে।
অফিসে ঢুকতেই দেখল বড়দি
মানে সুনীতিদি সামনের দিকে
মুখ করে
একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা
বলছেন। ভদ্রলোকের মুখ দেখা
যাচ্ছে না,
তিনি পিছন
দিকে ফিরে
বসে আছেন।
সুনীতিদি মিত্রাকে দেখতে পেয়ে
ডাকলেন---আয়, তোর সঙ্গে আলাপ
করিয়ে দিই,
ইনি হলেন
সুধাময়, সুধাময়
সরকার। আমাদের
স্কুলে গতকাল
নতুন জয়েন
করেছেন, ফিজিক্সের। ‘
তারপর মিত্রার দিকে ফিরে
বললেন---‘ আর এ হল মিত্রা,
আমাদের পুরনো সহকর্মী, স্কুলে বায়োলজির টিচার।‘ ভদ্রলোক মনে হয় হাসি মুখ
করে কিছু
বলতে যাচ্ছিলেন, মিত্রার মুখ
দেখে আর সে সাহস
না করে
শুধু হাত
দুটো বুকের
কাছে তুলে
দাঁড়ালেন। সুনীতিদি দুজনকেই বসতে
বলে শুরু
করলেন আলোচনা। অদিতি ঠিকই
বলেছিল, রুটিনের কথা, ক্লাস
এরেঞ্জমেন্ট, প্র্যাক্টিকাল ক্লাস এইসব আলোচনার জন্যই ডেকে
পাঠিয়েছিলেন। তাহলে
কালকের ব্যাপারটা কি হল!
মনে মনে
ভাবল মিত্রা,
কিন্তু কিছু
বলল না।
কথা সারতে প্রায়
গোটা একটা
পিরিয়ডই গেল।
এই পিরিয়ডটা মিত্রার অফ ছিল। বেরিয়ে
আসতে যাবে,
বড়দি বললেন,---এনাকেও সঙ্গে
নিয়ে যা,
স্টাফরুমটা দেখিয়ে
দিস।‘
মিত্রা বড় বড় চোখ
করে অবাক
হয়ে তাকাল
বড়দির দিকে।
ইনি কি আমাদের সঙ্গে,
আমাদের স্টাফরুমে বসবেন নাকি---মনে মনে
ভাবল মিত্রা। সুধাময় হয়ত
বুঝতে পেরেছিলেন, বললেন---না, মানে আমি তো অফিসেই বসতে
পারি!
সুনীতিদি বললেন---না, তা কেন, ওপরে
তো একটা
আপনাদের স্টাফরুম আছে, ফিজিক্স আর বায়োলজি রুমের মাঝে,
আগে যাঁরা
ছিলেন তাঁরা
ওখানেই বসতেন’ বলে মিত্রার দিকে তাকিয়ে
বললেন, ---তুই ওঁদের রুমটা দেখিয়ে
দে, সঙ্গে
নিয়ে যা ওনাকে।‘
বড়দিকে নমস্কার করে মিত্রার সঙ্গে বেরিয়ে
এলেন ভদ্রলোক।
বড়দি ঠিকই
বলেছেন। এর আগেও তো দুজন মাষ্টারমশাই ছিলেন এই স্কুলে, দুজনেই
অন্য স্কুলে
চলে গেছেন।
ছেলে টিচারদের জন্য দোতলায়
একটা স্টাফরুম আছে, বিজয়,প্রকাশরা ওখানেই বসতেন।
একদিকে ফিজিক্সের প্রাক্টিক্যাল রুম,
আর অন্যদিকে বায়োলজি, এই দুয়ের মাঝখানে একটা ছোট্ট
রুম আছে।
দুটো আলমারি,
একটা ড্রয়ার
দেওয়া মাঝারি
মাপের টেবিল,
গোটা তিনেক
চেয়ার, একটা
আরাম কেদারা আর লাগোয়া একটুকরো একটা টয়লেট।
কিন্তু ইনি
তো একা,
সারাদিন মুখ
বুজে থাকবেন কি করে! মিত্রা
ভাবল সেকথা।
‘কিন্তু তাই বলে আমি আমার
কাজ ফেলে
তোমার সঙ্গে
গল্প করতে
আসছি না,
যতই পাশাপাশি ক্লাস হোক
আমার। তাছাড়া
এটা মেয়েদের স্কুল, এখানে একটা
ডিসিপ্লিন আছে,
সেটা মেনে
চলতে হয় সবাইকে...মনে মনে ভাবল সে।
ওপরে উঠে
এসে ঘরটা
হাত বাড়িয়ে
দেখাল মিত্রা। মুখ বাড়িয়ে
ফিজিক্স রুমে
কাজ করে
যে ছেলেটি,
পলাশ, তাকে
ডেকে পরিচয়
করিয়ে দিল---পলাশ, ইনি
তোমার মাষ্টারমশাই’
খুশি হল পলাশ। তার
হাতে সুধাময়কে সঁপে দিয়ে
নীচে নেমে
এল মিত্রা।
(২)
আর ভাল
লাগছে না সুধাময়ের। প্রায়
ছ’মাস হয়ে গেল
এই স্কুলে। স্কুলটা খারাপ
নয়। মেয়েরাও যে খুব
অবাধ্য, তা নয়। মেয়েদের স্কুল যেমন
হয়, এও তেমনি। কিন্তু
একা একা
কাঁহাতক মুখ
বুজে এভাবে
কাটানো যায়
! এতদিনে বুঝতে
পেরেছে সুধাময়,
কেন এই স্কুলে ছেলে
টিচার রা বেশিদিন থাকেন
না। এই একাকীত্ব অসহ্য।
যতক্ষণ ক্লাস থাকে, কেটে
যায়। সুধাময়
তার কাজে
ফাঁকি দেয়,
একথা বলতে
পারবে না কেউ। মন দিয়ে ছাত্রীদের পড়াতে চেষ্টা
করে সে।
ক্লাস না থাকলে কিছুক্ষণ এখানে বসেই
সে চলে
যায় অফিস
ঘরে বরুণবাবুদের কাছে। কিন্তু
সেখানেও অসুবিধে। বরুণবাবু বয়স্ক
মানুষ, তিনি
ডাকলেও অন্য
যারা আছে
দু/চার
জন ছেলে-ছোকরা, তারা
অসুবিধে বোধ
করে। মাষ্টারমশাইরা আবার
এখানে কেন! কাজেই
একটু সময়
কাটিয়ে আবার
ফিরে আসে
এখানেই। শুধুমাত্র, কোন মিটিং
বা মেয়েদের কোন অনুষ্ঠান থাকলে দেখা
হয় সকলের
সঙ্গে, অল্পস্বল্প কথাও
হয়। অন্যসময় করিডরে দেখা
হলে শুধু
হাসি বিনিময়। স্কুলের এই দিকটায় দোতলায়
শুধু বড় দুটো প্রাক্টিক্যাল রুম আর এই স্টাফরুম । অন্যদিকেও ঠিক
এমনি কেমিস্ট্রি
আর জিওগ্রাফির প্রাক্টিক্যাল রুম
আর একটা
ছোট্ট ঘর আছে, মাঝে
মাঝে দেখেছে
কাউকে ক্লাস
নিতে কিন্তু
সেটা মনে
হয় খুব
একটা ব্যবহার হয় না।
কিন্তু সেদিকে
যাওয়ার কোন
দরকার হয় না সুধাময়ের। এদিকে দেখা
হবার হলে
একমাত্র মিত্রার সঙ্গেই বারান্দায় সে দাঁড়ালে দু/চারটে
কথা হয়।
কিন্তু মিত্রা
বেশিক্ষণ দাঁড়ায়
না। তার
খুব দুর্নামের ভয়। মনে
মনে হাসে
সুধাময়। সহকর্মীর সঙ্গে কথা
বলাতেও এত ভয়! মিত্রাকে তার ভালই
লাগে। ছিপছিপে, সুশ্রী। যদিও
ঠিক সুন্দরী বলা যাবে
না। তাহলেও
তাকে দেখতে
ভালই লাগে।
আরও একটি
মেয়ে আছে,
অদিতি, মিত্রার খুব বন্ধু
সে। কখনো-সখনো নীচে করিডোর
দিয়ে যাবার
সময় স্টাফরুমের দিকে তাকিয়ে
দেখেছে মিত্রা
আর সেই
মেয়েটি অদিতি
কথা বলছে।
মিত্রার একটা স্বভাব
হল, দুহাতের পাতায় মুখ
রেখে সে চুপ করে
কথা শোনে।
মিটিংয়েও দেখেছে
তাকে এই ভাবে বসে
থাকতে। সুধাময়ের এই ঘরের বাঁদিকে একটা
বন্ধ জানালা
আছে। সেখান
দিয়ে অল্প
একটু ফাঁক
দিয়ে মিত্রার বায়োলজি রুমের ভিতরটা দেখা
যায়। মাঝে
মাঝে সে দেখেছে মিত্রা
খুব মন দিয়ে ছাত্রীদের পড়াচ্ছে। কোনসময়
যে ছেলেটি
কাজ করে
এই রুমে,
তাকে সঙ্গে
নিয়ে ঝাড়-পোঁছ, ফরমালিন ঢালা বোতলে
বোতলে এসব
করতেও দ্যাখে। অনেকসময় ছাত্রীরা পড়া বলছে
আর মিত্রা
দু-হাতের
পাতায় মুখ
রেখে চুপ
করে শুনছে
সেরকমও দেখেছে। বেশ লাগে
তখন দেখতে।
কিন্তু কি ব্যাপার, আজ এত মিত্রার কথা ভাবছে
কেন সে!
নিজের মনেই
হেসে ফেলল
সুধাময়। হাতদুটো ওপরে তুলে
আড়মোড়া ভাঙল।
এক কাপ
চা পেলে
ভাল হত,বলবে নাকি
পলাশকে একবার
!
ঘরের বাইরে
এসে দেখল
পলাশ আর বায়োলজি রুমে
কাজ করে
যে ছেলেটি,
সুশীল, দুজনে
মিলে কি নিয়ে যেন
হাসাহাসি করছে,
সুধাময়কে দেখে
চুপ করে
গেল। পলাশকে
এককাপ চা আনতে বলে
আবার নিজের
জায়গায় বসল
সুধাময়। মাথাটা
আজ খুব
ধরে আছে,
শরীরটাও যেন
ঠিক ভাল
লাগছে না।
একটা মাথা
ধরার ওষুধ কিছু
আনতে দিলে
ভাল হত।
আরাম চেয়ারে
বসে চোখ
বন্ধ করে
মাথাটা হেলিয়ে
দিল দিল
সুধাময়।
(৩)
ডাকাডাকি, চ্যাঁচামেচিতে যেন ঘুম ভাঙলো
সুধাময়ের। চোখ
খুলে দ্যাখে
সামনে অনেকের
মুখ। এদিক-সেদিক তাকিয়ে
দেখল মিত্রা,
অদিতি, শেফালিদি, বীণাদি, আরো
কেউ কেউ এমনি
কি সুনীতিদি মানে বড়দিও
তাকে ঘিরে
দাঁড়িয়ে। উনিই
কথা বললেন
প্রথম,
---কেমন লাগছে
এখন, শরীর
কি খুব
খারাপ, তাহলে
বাড়ি গিয়ে
বিশ্রাম নিন।কেউ নাহয় সঙ্গে
করে দিয়ে
আসুক।।‘
অবাক চোখে
তাকাল সুধাময়। কি হয়েছে,
সেকি ঘুমিয়ে
পড়েছিল, নাকি
অজ্ঞান হয়ে
গেছিল? মৃদুস্বরে সকলের দিকে
তাকিয়ে বলল,
--না, মানে
আমি ঠিক
বুঝতে পারছি
না, কি বলুন তো?’
শেফালিদি এঁদের
মধ্যে সবচেয়ে
প্রবীণা। হেসে
বললেন,
--সে কি?
পলাশ তো গিয়ে আমাদের
ডেকে আনল।
আপনাকে ডেকে
ডেকে সাড়া
না পেয়ে ভয় পেয়েছিল। কি ব্যাপার বলুনতো,
ঘুমিয়ে পড়েছিলেন...?
ইতস্ততঃ করল
সুধাময়...না, মানে, শরীরটা...’
শেফালিদি এগিয়ে
এসে বললেন--জ্বর হয়নি
তো... বলে কপালে হাত দিয়েই
বলে উঠলেন...জ্বরই তো,
গা পুড়ে
যাচ্ছে, কি মুশকিল, আমাদের
বলেননি কেন?
আমরা নাহয়
নীচে থাকি,
মিত্রাকেও তো বলতে পারতেন,
সে তো এখানেই বেশি
থাকে...বলেন নি কেন ওকে?’
--মাথাটা খুব
ধরেছিল, তাই...মৃদুস্বরে বলার
চেষ্টা করল
সুধাময়।
মিত্রার দিকে
চোখ গেল
সুধাময়ের। একদৃষ্টিতে দেখছে তাকে।
চোখাচোখি হতেই
দৃষ্টি নামিয়ে
নিল। বাকিদের দিকে তাকিয়ে
বলল,
----কি কান্ড,
বুঝতেই পারিনি...আপনারা শুধু
শুধু আপনাদের ক্লাস ছেড়ে
এইভাবে...খারাপ লাগছে, কোনো মানে
হয় না...’
সুনীতাদি ঘরের
বাইরে পা রাখলেন। যাবার
আগে বলে
গেলেন সুধাময়ের দিকে তাকিয়ে--
---বাড়ি যেতে
চাইলে যেতে
পারেন। আজ আর আপনাকে
ক্লাস নিতে
হবে না।
আর এখানে থাকতে
চাইলে নীচের
স্টাফরুমে গিয়ে
বসুন। আপনার
ক্লাসটা করবীকে
বলে দিচ্ছি,
মেয়েদের ডেকে
নিয়ে ড্রিল ক্লাসে
চলে যাক। প্রাক্টিক্যাল ক্লাসও
আজকে নিতে
হবে না।
‘
সুনীতাদি চলে
গেলেন। সুধাময়
বাকিদের সঙ্গে
নেমে এলেন
নীচের স্টাফরুমে। শেফালিদি একটা হাত ধরে
রইলেন সিঁড়ি
দিয়ে নামার
সময়। কৃতজ্ঞতা বোধ করল
সুধাময়। সহকর্মীদের সহৃদয় ব্যবহার আপ্লুত করল
তাকে। আজ খানিক আগেও
সে ভাবছিল
অন্য স্কুলে
চলে যাবার
কথা। এখন
মনে হল---মেয়েরাই পারে
এমন করে
আপন করে
নিতে। এই আন্তরিকতার কি মূল্য দেবে
সে? তাকে
একটা আরাম
চেয়ার ছেড়ে
দিয়ে লাবণ্যদি উঠে দাঁড়ালেন, ক্লাস নিতে
যাবেন। যারা
ছিল, তাঁদের
বলে গেলেন,
সুধাময়ের যদি
কোন দরকার
হয়, দেখতে। প্রয়োজনে খবর
দিতে। নীচের
স্টাফরুমে আরাম
চেয়ারটাতে মাথা
হেলিয়ে দেবার
আগে আরো
একবার সকলের
দিকে তাকাল কৃতজ্ঞতার চোখে। দেখল
মিত্রা তার
হাত দুটো
জড়ো করে
দুহাতের পাতায়
মুখ রেখে
তার দিকেই
তাকিয়ে। চোখ
বুজল সুধাময়।