গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

৩য়বর্ষ ১৬তম সংখ্যা ।।৩০শে জুন২০১৪।।১৫ই আষাঢ় ১৪২১

এই সংখ্যার লেখক সূচি - শৌনক দত্ত, সূর্যনাথ ভট্টাচার্য, অনিন্দিতা সাধুখাঁ, জয় চক্রবর্তী, মৌসুমী রায়(ঘোষ) ও আসমা চৌধুরী

                        সূচিপত্রে ক্লিক করে পড়ুন

শৌনক দত্ত

উতল হাওয়া...

রূপমানিয়া পরশু ফিরবে। লেখার টেবিল,ঘরদোর গুছিয়ে ঠাকুর ঘরের সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়েছি ধর্ম,ঈশ্বর দেবতায় আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই অথচ রূপমানিয়া এই ঘরেই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতো রোজ পূজা আর্চায়।রূপমানিয়া থাকতে এই ঘরের দিকে এতগুলো বছরে আজকের মত কখনো দেখিনি আমি কখন ভেতরে ঢুকে প্রদীপ ও ধূপকাঠি জ্বেলে দিয়েছি খেয়ালই করিনি।বয়স কি কখনো কখনো বিশ্বাস বদলে দেয় ?

            তোমার বিশ্বাসই আজ আমার পাথেয় ছোট্টবেলা থেকে তোমায় দেখেছি ধর্ম,জাতপাত কে নস্যাত্ করে দিতে তোমার যে রক্ত আমার ভেতর তা ধর্ম নয় মানুষ চেনে তোমরা ও তো ভালবেসে বিয়ে করেছো ভালবাসা তো ভালবাসাই তাতে আবার ধর্ম কি ? বাবা,তুমিই বলো আমি কি অন্যায় করেছি রাহাত কে বিয়ে করে ? আমি জানি আমাকে কেউ না বুঝলেও তুমি ঠিক বুঝবে আমায়,কথাটা বলতে বলতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো রুদালী চোখে কতদিনের জমে থাকা জল যেন বাঁধ ভেঙ্গেছে
এরই মধ্যে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। রুদালী আমাদের মেয়ে মাল্টিন্যাশানাল এক কোম্পানীর বড় চাকুরীজীবি রুদালী যেদিন পৃথিবীর আলো দেখলো সেদিন নারী দিবস আমরাও সেদিন ঠিক করেছিলাম আমাদের মেয়ে নারী নয় মানুষের মত বড় হয়ে উঠবে।তাই রুদালীর বেড়ে উঠায় আমার চেয়ে ওর মা র যত্ন ছিলো বেশি নিজের অপূর্ণতাকে সে যেন মেয়েকে দিয়ে পূর্ণ করতে চেয়েছে রুদালীর ডাকে ঘোর কেটে যায়,বাবা আমি হাসপাতাল যাবো চার.. হাসপাতাল যাওয়া নিয়ে রুদালীকে ফেরাবার নৈতিক অধিকার আমার নেই। তবু নিজেকে শক্ত করে বললাম- না,তুমি হাসপাতাল যাবে না বিস্ময়ে তাকালো রুদালী আমি এই দৃষ্টি চিনি,এই চাউনিতে হাজার প্রশ্নের বান চোখ নামিয়ে নিলো রুদালী -দূর থেকে দেখে চলে আসবো কথার পিঠে কথা সাজানোই আমার পেশা যদিও তবুও রুদালীর এই কথায় যেন আমি কথা হাতড়ে বেড়াই না বোধক মাথা নাড়ি রুদালীকে আর ভাবি খুব কাছের সম্পর্ক ও কখনো কখনো খোলা ফিতার মত দূর থেকে দূরে চলে যায়

            এত দূর থেকে রুদালী আজকের মর্নিং ফ্লাইটে এসেছে আসার পর থেকেই ঘরের এটা সেটা কাজ করছে,এখন সন্ধ্যার চা বানিয়ে নিয়ে এলো আমার আর ওর -বাবা -হুম - তোমার কি মনে হয় না মা ব্যাপারটাতে ওভার রিএক্ট করেছে ? এইসময়ে দাঁড়িয়ে এত প্রগতির কথা বলে মা যে আজো পেছন সারির মানুষ রয়ে গেছে আমি ভাবতে পারিনি,তুমি ভাবতে পেরেছো ? রুদালীর প্রশ্নের উত্তরে চায়ে চুমুক দেই আর ভাবি মেয়েটা এই দেড়মাসে যেন অনেক বড় হয়ে গেছে । আজ বড় অচেনা লাগচ্ছে ওকে

         আজকের সকালটা বড্ড অচেনা গতরাত ঘুমাতে পারিনি রুদালীর যুক্তিতর্কের ভিড়ে তলিয়ে যেতে যেতে মনে হয়েছে,বিশ্বাস আঁকড়ে বাঁচা মানুষ বিশ্বাসের ফাটল মেনে নিতে পারেনা রূপমানিয়াও পারেনি রূপমানিয়া কেন পারেনি আজ রুদালীর কাছে বড় এক প্রশ্ন। রূপমানিয়া কি আধুনিকা হয়েও মননে প্রাচীনপন্থি ?এইসব চেনা অচেনা অস্থিরতায় কখন রাত কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি
খুব চিন্তায় ছিলাম রুদালীকে মুখের উপর বলতে পারিনি চলে যেতে।রূপমানিয়া হাসপাতাল থেকে ফিরে একপলক দেখলো রুদালীকে তারপর হাতের ইশারায় ডাকলো গত দুদিনের রুদালী যেন উধাও।ধীর পায়ে এগিয়ে এলো রুদালী। -কেন এসেছো?আমার এই অসুখ তোমার জন্য হয়নি রুদালী অপলক দাঁড়িয়ে থাকে আমি কি করবো বুঝে পাইনা সকালে একবার ভেবেছিলাম রুদালীকে বলি ফিরে যাও সেটা বলতে পারলেই হয়ত ভালো হতো রূপমানিয়া কি একটু একটু করে উত্তেজিত হয়ে উঠছে ? -মা,তুমি এখন কেমন আছো ? রূপমানিয়া কথার উত্তর দেয় না আমার দিকে পলকে তাকায় তাকিয়েই চোখ ফেরায় তারপর পা তুলে শুয়ে পড়ে রুদালীর চোখে আমার চোখ পড়ে যায়

         বাইরে আকাশ মেঘলা।গত কদিন ধরেই রোদের দেখা নেই মেঘ যেন কাটছেই না কিছুতেই রুদালীর চোখেও মেঘ। পলকে বেরিয়ে যায় আবার ফিরে আসে তারচেয়েও বেশি গতিতে - মা,বিধর্মীকে ভালবাসা কিংবা তাকে বিয়ে করাকে এত বড় করে দেখছো কেন তুমি আমি তোমাদের শিক্ষাতেই একজন মানুষকে জীবনে গ্রহন করেছি ধর্ম কে নয় এতে তুমি এত রিয়েক্ট করছো তবে কি তোমার শিক্ষা ভুল ছিলো মা ? চুপ করে থেকো না জবাব দাও রুদালী চিত্কার করে উঠে।তারপর ঘরময় নিঃস্তব্ধতা স্তব্ধতা কাটিয়ে খুব ধীরে রুদালী বেরিয়ে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়ায়।দরজার কাছাকাছি যেতেই রূপমানিয়া উঠে বসে -আমার শিক্ষা,আমার বিশ্বাস ভুল ছিলো বড় ভুল শিক্ষা দিয়েছি তোমায় তুমি একদম ঠিক বলেছো।কিন্তু নিজের সত্ত্বা,নিজের পরিচয় বিসর্জন দিতে তোমাকে শেখাইনি কখনো রুদালী ঘাড় ঘুরিয়ে শুনছিলো এবার ঘুরে কিছুটা দৌঁড়ে আসে মা তোমার রুদালী চট্টোপাধ্যায় তাই আছে শিক্ষা বিকিয়ে রুদালী ইয়াসমিন হয়নি ভালবাসার জন্য ।

         পর্দার ফাঁকে ভেজা রোদ উঁকি দেয় অনেক দিনের পর।আমি জানি বোরখা কোন বিষয় নয় আর কোরান রূপমানিয়াও পড়েছে!কিন্তু আসল অভিমানটা ধরতে পারিনা তবে কি প্রগতির কোন কোণেই বাস করে জন্মগত বিশ্বাস,ধারনকৃত সংস্কার আর রীতির বুদবুদ?নাকি সারাজীবন যা ধারন করি তার সন্তরণ বয়সের সাথে সাথে টানতে থাকে গভীরে আর নিজের অজান্তে ডুব সাতাঁর গহীনে।


অনিন্দিতা সাধুখাঁ


মুক্তির আকাশ...
           
        বিকেলের রক্তিম আভায় নিজেকে আকণ্ঠ ভেজাতে বড্ড ভালো লাগে অনুর... সকাল থেকে দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকা ঘড়িটা এই সময় যেন একটু থমকে অনুর সাথে কিঞ্চিৎ গল্প সারে। অনুর মনের না বলা কথাগুলো শোনার একমাত্র সঙ্গী সে...তাই বিকেলটাতে এই ছোট্ট ব্যালকনিটা যেন অনুর জীবনে বেঁচে থাকার জিয়নকাঠি... রোজ এখানে বসে একটু নিজের সাথে কথা বলে সে।

আজকাল শুভ মানে অনুর স্বামী শুভেন্দুর অফিস থেকে ফিরতে আরো দেরী হয়। আর অনুর মেয়ে রাই স্কুল থেকে টিউশন পড়ে বাড়ি ফেরে সন্ধ্যেবেলা বর্তমান যুগের আধুনিকা মেয়ে রাই, বয়েসের তুলনায় বেশ অনেকটাই পরিণত এগিয়ে যাওয়ার ইঁদুর দৌড়ে সে বেশ গতিতেই ছুটছে আর শুভ, সামান্য কেরানী থেকে জীবন শুরু করে এখন সে ম্যানেজার... যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সকলেই দৌড়াচ্ছে আর অনু ?......... কেন সেও তো সকাল থেকে ছুটছে সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘর তার ব্যস্ততার প্রধানতম জায়গা। শুভর চা, মেয়ের হরলিক্স তারপরই টিফিন তৈরি করা ... ঠিক সাতটা বাজলে সুজাতার মা এলেই কী কী রান্না হবে তা বলেই রাই কে তোলা , পড়তে পাঠানো , শুভর বাথরুমে টাওয়েল, পাজামা রেখে আসা -----স্নান সেরেই " অনু টাই তা কই?" , "পার্সটা ড্রয়ারে নেই কেন?" , "আর এক পাটি মোজাটা একটু দেখে দেবে প্লিজ " ----- সব হাতে হাতে দিতে অনু কী কম দৌড়ায় ?? ৯টায় শুভ বেড়িয়ে গেলে আর এক প্রস্ত দৌড় থাকে অনুর মেয়ে কে নিয়ে ১০ টার বাসে মেয়েকে চাপিয়ে দিয়ে অনুর ছুটি বাইরের স্কুল বাস যাওয়ার অনুর পর ক্ষণিকের অবসর... একটু জিরিয়ে বাজার-দোকান, ব্যাঙ্কের কাজ, মেয়ের স্কুলের খাতা পত্রে চোখ বোলাতে বোলাতে কখন যে আস্ত দুপুরটা নিস্তব্ধতাকে নিয়ে অনুর দরজায় কড়া নারে কিছুতেই বুঝতে পারেনা সে ... তারপর স্নান খাওয়া সেরে ক্লান্ত শরীর বিছানা টানে ... এই বিকেলটা তাই অনুর নিজেকে খুঁজে পাওয়ার একমাত্র সময়...

স্কুল জীবনে ১০০ মিটার দৌড় বা ৪০০ মিটারে , রিলে রেসে, অনু চিরকাল প্রথম।। ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত টানা প্রথম হয়ে এসেছে সে... নাহ রাইয়ের মত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সে পড়েনি... পাড়ার পরিচিত এক বাংলা মিডিয়াম স্কুলে তার শৈশব কেটেছে ... পাড়ার গানের প্রতিযোগিতায় অনুর সমতুল্য কেউ ছিল না। দুই বোন আর এক ভাই এর মধ্যে অনু নিজের গুনেই বাবার ভালবাসার বেশিটাই নিজের দখলে রেখেছিল চিরকাল কারখানা থেকে ফিরে ঘরের সামনের বারান্দায় বসে অনুর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বাবা প্রায়ই বলত, " মা, নিজের পায়ের তলার মাটিটা শক্ত করতেই হবে, ওটা ছাড়া মুক্তির আকাশ অধরাই থেকে যাবে।" ঘন কালো রাত্রিতে বাবার স্নেহ পরশ, পরম আশীর্বাদের মাঝে অনু এক অদ্ভূত প্রশান্তি অনুভব করত। এম, পাশ করে টিউশনির ৩০০ টাকা বাবার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল... "বাবা , আমার মুক্তির আকাশ ! "

শুভর সাথে অনুর আলাপ মিতার জন্মদিনে শুভর ব্যক্তিত্বই অনুকে মুগ্ধ করে সবচেয়ে বেশি...অনুর মত তখন সে জীবনযুদ্ধের এক সৈনিক। একে অপরের অবলম্বন হয়ে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করতে করতে কখন যে একে অপরের বেঁচে থাকার একমাত্র সংজ্ঞা হয়ে উঠেছিল তা অনু আজ বুঝতে পারে না স্কুলের চাকরির প্রথম খবরটা শুভকে দিয়ে অনু এক অনাবিল প্রশান্তি লাভ করেছিল। অনুর চাকরি তাদের সম্পর্কের পরিণতিকে কিছুটা নিশ্চয়তা দিয়েছিল। কিছু দিনের মধ্যেই শুভর চাকরির পর "আমি তুমির সুখি সংসার " এর স্বপ্ন দেখিয়েছিল এই দুই প্রেমিক-প্রেমিকাকে অল্প বেতন বলে মা আর দিদির বিয়েতে আপত্তি থাকলেও অনুর বাবার প্রানভরা আশীর্বাদকে সঙ্গি করে শুরু হয় অনুর বিবাহিত জীবন অধ্যায়

ভাড়া বাড়ি, একটা ছোট্ট ঘর, কমন বাথরুম, নির্দিষ্ট সময়ে কলের জল ধরে রাখা, সাত সকালে উঠে সংসার সামলে ট্রেনে বাসে ঝুলতে ঝুলতে স্কুল যাওয়া ------ যেন জীবনের নতুন জলছবি আঁকা নিত্য সংগ্রামের মাঝেও দুজনের ভালবাসার দৃঢ় বন্ধনে যেন জীবনতরী আপন ছন্দে ভাসতে থাকে জনসমুদ্রের মাঝে। কথায় বলে যৌবন কখন আসে আর কখন চলে যায় বোঝাই যায় না। অনুও বুঝল না। জীবনের সবচেয়ে মধুর সময় কেটে গেল সংগ্রামরত ভাবে সংসারের যাঁতাকলে নিজের সুখ, ইচ্ছে, প্রাপ্তির স্বপ্নগুলোকে পৃষ্ট করে আরো উন্নতির আশায় ছুটতে থাকল দুজনে। মাথা গোজার নিজের ভিটে, আরো একটু ভালো থাকার ইচ্ছে পূরণের আশায় ছুটতে থাকল দুজনে স্কুল ছাড়া টিউশন ধরল অনু। খাবার টেবিলে দুটো ক্লান্ত শরীর আর এক পৃথিবী স্বপ্ন ভরা চারটি চোখ ----দিন কাটতে থাকল। আগের মত ছুটির দিনে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে বেড়িয়ে পড়া, মাঝে মাঝে গঙ্গার ধারে দুজনের বসা, কোন বন্ধুর বাড়ি একটা সন্ধ্যে নির্ভেজাল আড্ডা মেরে কিছুটা মনের রসদ জোগাড় করা ------- নাহ এসব কিছুই আর নেই অনু-শুভর জীবনে। এমনকি এত সুন্দর অনুর গানের গলাও আর আনমনা হয়ে সুরে ভাসে না। মেয়ের জন্ম নাকি বাবার জীবনে শুভর বার্তাবহ। অনু হবার পর দ্বিতীয় কন্যা সন্তান শুনে তার মার মুখ কিছুটা ভার হলেও অনুর বাবা একথা বলেছিল। অনুর জীবনেও একরাশ আনন্দ নিয়ে ঘর আলো করে এল রাই।
বিবাহিত জীবনের এক যুগ কাটিয়ে দিল অনু অনেক পালাবদলের সাক্ষী সে বর্তমানে তার ঠিকানা মানিকতলায় পাঁচতলা উঁচু এক বড় সড় ফ্ল্যাটে যা আধুনিক আসবাবপত্রে সুসজ্জিত। আকাশটা অনেক কাছে এখন। রাই ক্লাস সিক্সে পড়ে শুভ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। আর অনু ? সুগৃহিনী-- নিপুন গৃহিনী--- কেবলই সুগৃহিনী

শুভর পদোন্নতি ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাইকে মানুষ করার দায়িত্বকে প্রধান করে অনুকে চাকরি ছাড়তে হল। নিজের মুক্ত আকাশ ধরে রাখতে বাড়িতে বসে কিছু টিউশন--- নাহ তাতেও আপত্তি শুভর বলেছিল " কী দরকার ? আমি তো আছি সব প্রয়োজন মেটাতে, তুমি মেয়েকে দেখো এখন রাইয়ের বন্ধু, স্কুল, টিউটরিয়ল, কম্পিউটার আর নাচ নিয়ে বেশ ব্যস্ত নিজের একটা জগৎ পদোন্নতির সাথে সাথে শুভরও ব্যস্তময় জীবন পরিধি। আর অনুর ! এই চার দেওয়ালে আবদ্ধ ফ্ল্যাটে মাঝে মাঝে কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে তার একাকীত্বের তীব্র যন্ত্রণা ক্ষতবিক্ষত করে নিরন্তর নিজস্ব জগৎ না থাকার বেদনা কুরে কুরে খায় তাকে গলা ছেড়ে গান গাইতে গেলেও সুর আসে না বাবার কথা, হারানো শৈশব, ফেলে আসা জীবন মনে করলেই চোখে জল আসে কেন ? তাহলে কি সে -সুখি? আজ সবই তো আছে তার জীবনের শুরুর সময় এসব সুখের স্বপ্নই তো সে দেখেছিল দুচোখে আর তাই সকাল থেকে রাত্রি নিপুন অভিনয়ে সে সকলকে বুঝিয়ে দেয় সে সুখী, তার সব আছে। শুধু নেই সেই মুক্তির আকাশ.........
টিং টং.........বেল বাজল ওই রাই এল বুঝি


অন্ধকারে চারিদিক ঘিরে এসেছে। অনু আবার মুখোশের আড়ালে নিজেকে ঢুকিয়ে নেয় এবার রাইয়ের গলায় নিশ্চুপ ঘরগুলো আবার প্রাণ ফিরে পাবে। আর অনুর প্রাণ ফিরে পাবে আগামীকালের পড়ন্ত গোধূলিতে, এই ব্যালকনির মাঝে.........