গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪

৩য়বর্ষ ২২তম সংখ্যা।।২২অক্টোবর২০১৪।।৪ঠাকার্তিক১৪২১


এই সংখ্যায় একটি ধারাবাহিক ও ন'টি গল্প । লিখেছেন - শৌনক দত্ত, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, অর্ধেন্দুশেখর গোস্বামী, অমলেন্দু চন্দ, ব্রতী মুখোপাধ্যায়, মনোজিত কুমার দাশ, শিবলী শাহেদ, শাহ ইয়াসিন বাহাদুর, দোলনচাঁপা ধর ও শুভ্রনীল .

                  সূচিপত্রে ক্লক করে সব লেখা পড়ুন

শৌনক দত্ত


সন্যাস ভুগোল (২য় পর্ব)

কোচবিহার শহরের ব্যাঙচাতরা রোড এলাকাটি রাজাদের নেক নজরে ছিলো না কখনোই  সারা কোচবিহারে রাজাদের কিছু না কিছু ছোঁয়া থাকলেও এই এলাকাটি অভিজাত্যের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত অথচ মরা পোড়া দীঘি পেরিয়ে একটু এগিয়ে পঞ্চরঙ্গীর মোড়, মায়া সিনেমাহল একটু সামনেই ঐতিহ্যবাহী রাসমেলার মাঠ তার পাশে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন স্কুল,ভিক্টোরিয়া কলেজ,জেনকিন্স স্কুল,স্টেডিয়াম,হাসপাতাল ও বিখ্যাত মদনবাড়ী সব কিছুতেই রাজাদের ছোঁয়া ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোচবিহার শহরের সব এলাকার চেয়ে অবহেলিত এই মরাপোড়া দীঘি থেকে ব্যাঙচাতরা রোড। এখানে জমির দামও অন্যসব এলাকার চেয়ে কম।আর তাই পূর্বপাকিস্তান থেকে আগতদের আবাসভূমি হয়ে উঠতে কোচবিহারের এই এলাকার বেশি সময় লাগেনি।যদিও পূর্বপাকিস্তানের সীমান্ত কোচবিহারঘেঁষা বলে সারা কোচবিহারেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পূর্বপাকিস্তানের লোকজন।কোচবিহারের ভৌগোলিক অবস্থানই এমন যে কেবল পূর্বপাকিস্তান নয় আসামের বাঙালী হটাও আন্দোলনের সময় ও অনেক বাঙালী কোচবিহারে এসেছে। ভূটান,নেপাল আর বিহারের কেউ কেউ জীবিকার টানে কোচবিহারে আবাস গড়েছে।তাছাড়া কোচবিহারের আদিবাসী কামতাপুরীরা তো আছেই। দিনে দিনে কোচবিহার তার আপন মহিমায় বহুজাতি ও সম্প্রদায়ের আবাসস্থল হয়ে উঠছে।ব্যাঙচাতরা রোডের দত্ত পরিবার আসামের নওগাঁ থেকে বিতাড়িত হয়ে কোচবিহার এসেছে।আদতে এই পরিবার পূর্বপাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা মহকুমার বাসিন্দা  শিল্পসংস্কৃতির উর্বরভূমি খ্যাত ময়মনসিংহ অঞ্চলের এই অভিজাত ব্যবসায়ী পরিবারটি স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক বছর আগে জমি বিনিময়করেছিলো নেত্রকোণার এলোচিয়া গ্রামের সাথে আসামের নওগাঁর। তখনো যুদ্ধের দামামা বাজেনি,আশংকাও দেখা দেয়নি  এই জমি বিনিময়ের পিছনে মূল কারণছিলো সুসং দূর্গাপুর রাজার সভাসদ  প্রফুল্ল দত্তের ষড়যন্ত্র মূলক বিষ প্রয়োগে মৃত্যু।দত্ত পরিবারের কর্তা নরেন্দ্রচন্দ্র দত্ত শ্যালক প্রফুল্ল দত্তের আকস্মিক মৃত্যু মনথেকে মেনে নিতে পারেননি প্রফুল্ল দত্তের মৃত্যুর পর নরেন্দ্রবাবুর কাছে তার প্রসাশনিক ক্ষমতা,অর্থবিত্ত,বহু­ বিধব্যবসা অনিশ্চয়তার আরেক নাম হয়ে ওঠে আর তখনই তিনি জমি বিনিময়ের জন্য মনস্থির করেন  নেত্রকোণার দত্ত বাড়ী আজ থমথমে  নরেন্দ্রবাবু বাড়ীর সামনে বড় থামের পাশে অনেকক্ষণ ধরে উদাসদাঁড়িয়ে আছেন কিরণবালা ট্রাংক গোঁচ্ছাচ্ছেন তার চোখ ঝাপসা। হামাগুড়ি দেয়া গোপালের দিকে আজ তার মন নেই।নারায়ন সামলাচ্ছে ছোটভাই গোপাল কে,বাড়ীর সবচেয়ে দুরন্ত ছেলে সুভাষ ও আজ কেমন চুপ মেরে গেছে নির্মাল্য তার বড়দি পুস্পর ঘরে বসে কাঁদচ্ছে  গৌরি আর সীতা তাদের বড়দির চুল রিটা দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে আর কাঁদচ্ছে  ব্যবসার সরকার থেকে রান্না ঘরের ঠাকুর সবার চোখ আজ ছলছল।আগামীকাল নরেন্দ্রবাবু ও কিরণবালা দেবীর বড় মেয়ে পুস্প কলকাতা যাবে পড়তে। নরেন্দ্র বাবুর বড় আদরের মেয়ে এই পুস্প পুস্পের জন্মের পরেই নরেন্দ্র বাবু তরতর করে উন্নতি করেন। হার্ডওয়ার এবং এলমোনিয়ামেরব্যবসা থেকে সোনা ও পাটের বড় কারবারী হয়ে ওঠেন।যদিও পুস্পের গায়ের রঙ কিরণবালার মত উজ্জ্বল নয় তবু নিজের গায়ের রঙের মতো শ্যামলা মেয়েকে নরেন্দ্রবাবুর লক্ষ্মী ভাবতে একটুও দ্বিধা হয়নি। চার ছেলে তিন মেয়ে নিয়ে নরেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং কিরণবালা দেবীর সংসার তাছাড়া ও বাড়ীতে গেয়াতি গোষ্টী কর্মচারী সব মিলে রোজ পঁয়ত্রিশ চল্লিশজনের পাত পড়ে তবুও পুস্পের শূন্যতা যেন অপূরণীয়  

ট্রেন ছুটছে কলকাতার দিকে ধোঁয়ার সাথে কয়লার স্ফুলিঙ্গ উড়ে আসে বাতাসে  জানালা দিয়ে সরে সরে যায় সর্ষে ক্ষেত ঘরবাড়ী।যেন পুস্পর সাথে তারাও ছেড়ে যাচ্ছে স্বদেশ  ভাইবোনদের কথা ভেবে ছলছল করে ওঠে পুস্পর চোখ।পুস্প জানে আত্মীয়ের বাড়ীতে থেকে তার এই নতুন শিক্ষাজীবন নেত্রকোণার মত এত সহজ হবে না।তবু প্রফুল্ল মামার মত অন্তত তার মৃত্যু হবে না এইটুকু ভেবে সে মনে শক্তি যোগায়। বিকাল ঘনিয়ে আসে।নির্মাল্য তার অভ্যাস মত দুপুরের ঘুম থেকে জেগে ওঠে বাইরে আসে। সঙ্গীতগুরু পুটুল মাষ্টার বিমর্ষমুখে ফিরে যাচ্ছিলেন নির্মাল্যকে দেখে দাঁড়ালেন কি রে গান করবি?এখন তো পুস্প নেই তোর গান শেখায়..কথাটা শেষ করতে পারলেন না পুটুল মাষ্টার তিনি দেখলেন নির্মাল্যের চোখ গলে জল গড়াচ্ছে।তিনি একটু অবাকই হলেন।যা চোখ ধুয়ে আয় গান কাল হবে। উপেন বাবু বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন   তিনি এগিয়ে এলেন।উপেনবাবু নরেন্দ্র দত্তের ব্যবসায়ী সরকার হিসাব নিকাশ দেখতে দেখতে কখন পরিবারের একজন হয়ে ওঠেছেন জানতেও পারেননি।উপেনবাবু দেখে পুটুলমাস্টার একটু হাসলেন।দেখুন মশাই এই ছেলেকে আজ দেখলে কে বলবে বড়দির সাথে ঝগড়া করে এই ছেলেই সঙ্গীত ছেড়েছে জেদে কথা বন্ধ ছিলো ভাইবোনের পুটুল মাস্টারের কথায় সায় দেন উপেনবাবু তা যা বলেছেন মাস্টার মশাই। তবে পুস্প নেই বাড়ীটা খাঁ খাঁ করছে। কারবারেও মন্দা যাচ্ছে,আমরা সবাই আজ লক্ষ্মীছাড়া ।কর্তা বাবু যে পুস্প কে লক্ষ্মী ডাকেন পুস্পর কোলকাতা যাবার পর তা যেন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি সঙ্গীতগুরু বাটুল মাষ্টারের শত চেষ্টাতেও নির্মাল্যকে আর গানে ফেরানো গেলো না কিন্তু এমন ঈশ্বর প্রদত্ত গলা কেবল জেদের কারণে হারিয়ে যাবে তা মন থেকে মানতে পারছিলেন না মাষ্টারমশাই তাই সারাদিনে যখনই অবসর পান একবার দত্তবাড়ীতে আসেন নয়ত গদিতে বসে নরেন্দ্রবাবু কিংবা উপেনবাবুকে তার মনের কথা বলেন।গদির সবাই যদিও জানে রাজপুত্তরের মত দেখতে নির্মাল্য অনেক গুণী ছেলে কিন্তু তার জেদ ও রাগের সামনে সব যুক্তি,কথা অচল। সে যা ভালো মনে করবে তা থেকে তাকে বের করার সাধ্য কারো নেই।তবু বাটুল মাষ্টার কে তারা নিরাশ করে না।আর বাটুল মাষ্টার ও তার মনবাঞ্চা পূরন হবার আশায় রোজ রোজ আসেন আরফিরে ফিরে যান। মোক্তারপাড়ার সবিতা সেন আর সুনামগঞ্জের ছেলে গোপল দত্ত নেত্রকোণার সঙ্গীতমহল মাতিয়ে রেখেছে।তাদের উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে র সুনাম কলকাতাতেও পৌঁচ্ছে গেছে আজ যদি পুস্পটা থাকতো এখানে ওর খ্যাতিও এমন হতো।কলকাতায় কি গানটা করছে নাকি ছেড়ে দিয়েছবাটুল মাষ্টারের কথা শুনে নরেন্দ্রবাবুর মনটা ভেতরে কেঁদে উঠে।কোন উত্তর না দিয়ে তিনি গদি থেকে নেমে বাইরে আসেন। হন্তদন্ত হয়ে উপেনবাবু পাটগুদাম থেকে ফিরছেন তাকে দেখেও দেখলেন না যেন।ধীর পায়ে নরেন্দ্রবাবু ডাকঘরের পথে হাঁটতে থাকেন   নির্মাল্য কে গানে ফেরাতে না পারলেও বাটুল মাষ্টারের প্রতিদিনের প্রচেষ্ঠা ব্যর্থ হলো বলা যাবে না।

 দত্তবাড়ীর ছোট্টছেলে গোপালকে গান শেখানো দায়িত্ব তিনি পেয়েছেন সঙ্গে নারায়ন কে তবলায়। মাঝে মাঝে তিনি সুভাষকে ডেকে পাঠান। ডানপিটে এই ছেলেটি তার বড় প্রিয়। কানে শুনে সঠিক সরগমে গান গেয়ে ফেলার অসাধারণ একটি ক্ষমতা আছে এই ছেলেটির কিন্তু তার স্থিরতা নেই।সারাদিন সাঙপাঙনিয়ে এ বাড়ীর আম ঐ বাড়ীর নারকেল পেরে বেড়ায়।সারাদিনের শেষে দেখা যায় পাঁচ সাতটা বিচার আসে গদিতে। মতিবাবুর চেম্বার সুভাষের বৈকালিকবৈঠকখানা।বিকালে চেম্বারের পাশ দিয়ে গেলে প্রায়শ সুভাষের কন্ঠে গান শোনা যায়।মতিবাবুর চেম্বারের পাশ দিয়ে যেতে যেতে এক বিকালে গান শুনে বাটুল মাষ্টার থমকে দাঁড়িয়েছিলেন। গান থামলে ডেকে পাঠালেন,কে রে এখানে গান ধরেছিস ? সুভাষ এসে সামনে দাঁড়ালো। প্রসংশা করবেন ভেবেও করলেন না তবে নতুন কোন গান তুলে দত্তবাড়ী এসেই তিনি সুভাষকে ডেকে পাঠান। তাকে গান শোনান দুদিন পরে মতিবাবুর চেম্বারের পাশে দাঁড়িয়ে সুভাষের গলায় সেই গানশুনে পরে আরেকদিন ভূলত্রুটি শুধরে দেন।নির্মাল্য ও মাঝে মাঝে সুভাষের সাথে মতিবাবুর চেম্বারে গায়।বাটুল মাষ্টার তাতেই সান্ত্বনা খুঁজে নিয়ে মুখে হাসি ঝুলিয়ে চেম্বার পিছে রেখে এগিয়ে যান অন্য কোথাও.. অক্টোবরের প্রায় মাঝামাঝি কলকাতার সন্ধ্যার হাওয়া হিমহিম।হেমন্তের সূর্য পশ্চিমে ডুবে গেছে অনেকক্ষণ।গোধূলির রঙ ডানায় মেখে ফিরে গেছে পাখি। জলরঙের মত ভুসাকালি অন্ধকার মুছে দিচ্ছে দিন শেষের সন্ন্যাসী আলো। রাস্তার দোকানগুলোয় চলছে সন্ধ্যাবাতির প্রস্তুতি।তারার মতো জ্বলে উঠছে বৈদ্যুতিক বাতি দোকানে দোকানে। স্টপিং স্টেশনের স্বল্প দূর থেকে ট্রামের টংটং আওয়াজ ভেসে আসচ্ছে কলকাতা পুস্পের এখন নখদর্পনে। কেনাকাটা করতে প্রায়ই একা একা বেরিয়ে পড়ে  শ্যামবাজেরের পথে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ীর কথা মনে পড়ে তার

কদিন আগে তার বাবার চিঠি এসেছে বিয়ের পাত্রের সন্ধানের সাথে এক কোনে লিখেছেন সব ভাইবোনের সাথে নির্মাল্যের গান শেখানো নিয়ে বাটুল মাষ্টারের নাছোড়বান্দা পিছে লেগে থাকারকথা। পুস্প জানে তার আদরের এই ভাইটি গানের পথ আর মাড়াবে না। সেদিনের ঘটনাটি তার মনে ছবির মত ভেসে ওঠে।রাজশাহী থেকে আসবেন গুনি শিল্পী অলকান্দা ভট্টাচার্য এই অনুষ্ঠানে গান গাইবার জন্য রিহার্সান করে নাম ঠিক হয়েছে। প্রথমে একে একে গাইবে পুস্পনির্মাল্য সহ আরো কয়েকজন তারপর সবিতা সেন,গোপালবাবু এবং শেষে অতিথি শিল্পী অলকান্দা। বাটুল মাষ্টার পুস্পর গানের পর একে একে সবাইকে ডাকলেন নির্মাল্যের ডাক আসেনা।ঐ দিকে সবিতা সেনমঞ্চে উঠে গেছেন।অস্থির নির্মাল্য বাটুল মাস্টারের কাছে এসে জানতে চাইলো তার ডাক কখন আসবে বাটুল মাষ্টার ব্যস্ততার মাঝে একটু রুক্ষে কন্ঠেই বললেন যা গান গাস তার জন্য এত তাগদা।এদের গান শুনে কান পাকা আজ আর তোর মঞ্চে উঠতে হবে না।নির্মাল্য ছোট হলে কি হবে তার আত্মসন্মানে লাগলো।শুধু দাঁত কিটমিট করে বললো আমি আর গান শিখবো না দিদিকেই শেখান বলে পলকে বাটুল মাষ্টারকে প্রনাম করে গটগট করে বেরিয়ে গেল। পুস্পর ঘোর কেটে গেলো মানুষের চিত্কারে আর ট্রামের বিকট শব্দে থেমে যাওঅয়। কোন দূর্ঘটনা হয়ত।লোকের মুখে মুখে বলা কথায় পুস্প ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করে। এগিয়ে যায়জটলা পেরিয়ে সামনে ক্ষতবিক্ষত দেহের দিকে তাকিয়ে তার একটু চিনতে ভুল হলো না মানুষটি কবি জীবনানন্দ দাশ। এত কাছে থেকে কারো মৃত্যু এর আগে সে দেখেনি।কয়েকদিন আগেই এই কবির কবিতা পড়ে তার একটি বই নির্মাল্যকে টিউশনির পয়সায় কিনে পাঠিয়েছিল। তাছাড়া জীবনবাবুর কাছে তিনি কয়েকদিন পিসেমশাইয়ের সাথে দেখেন তার বাসায় ইংরেজীর নানান সমস্যা নিয়ে।জটলার মাঝেই কথার পৃষ্টে কথায় সবাই প্রায় একমত এটা আত্নহত্যা। সারাটা রাত চোখের পাতা এক করতে পারলো না পুস্পচোখ বন্ধ করলেই দৃশ্যটা যেন পষ্ট হয়ে ওঠে। দূর্ঘটনা নাকি আত্নহত্যা সুত্র গুলো মেলাতে পারে না পুস্প। বাইরে অন্ধকারের অস্ত যাচ্ছে। অতিদূরে গাছের মাথায় যদিও কিছু আঁধার ঝুলে আছে।আজকেই হয়ত বাবা মা আসবেন কিন্তু চিরচরিত আনন্দটা অন্য সময়ের মত আজ আর তার মনে খুশির বুদবুদ তুলছেনা।কোলকাতার বিশ্বাসবাড়ীর ছেলের সাথে পুস্পর বিয়ে ঠিক হয়েগেলো। পুস্পর গিন্নীপনা রূপ দেখে কিরনবালা আরনরেন্দ্রবাবু বেশি খুশি এবার তাদের নেত্রকোণায় ফিরতে হবে।জামাই জেদ করেছে আরো কিছু দিন থেকে যাবার কিন্তু কারবারী দত্তবাবুর সে সময় কোথায় অনেক বুঝিয়ে তারা ফিরে যাবার মনস্থির করলো।পুস্প কেঁদে কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছে।জামাইয়ের চোখ ও ছল।তবু শ্বশুড় শাশুড়িকে ট্রেনের টিকিট কেটে তুলে দিয়ে এসেছে। প্রথমস্থান অধিকার করে নির্মাল্য নবম শ্রেনীতে উঠেছে নারায়ণ ও প্রথম হয়ে ফোরে কিন্তু সুভাষ আবার ফেল করেছে।দত্ত উচ্চবিদ্যালয় এরমক অমনোযোগী আর দুষ্টু ছেলেকে স্কুলে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তবু স্কুলের গর্ভনিং বডির সভাপতি নরেন্দ্র দত্তের বিশেষ অনুরোধে তাকে স্কুলে বহাল রাখা হলো। নতমাথায় মিটিং থেকে ফিরে গদিতে বসলেন নরেন্দ্রবাবু গদিতে ক্রেমাদের ভিড় থাকলেও কর্তা থম মেরে বসে পত্রিকা দেখছেন কিন্তু কিছুপড়ছেন না পাতার পাতা উল্টে যাচ্ছেন। নীরবতা ভেঙে প্রধান সরকার যোগেনের দিকে তাকিয়ে বললেন সুভাষ কোথায়যোগেন বাবু ধীর গলায় বললেন খেলতে গেছে বোধ হয় একসিকি নিয়ে গেলো একটু আগেই  আপনার আর উপেনবাবুর আশকারা পেয়ে পেয়ে ছেলেটা উচ্ছন্নে গেছে বুঝলেন। উপেন বাবু মাথা নত করে কি একটা করছিলেন যেন কর্তার কথা সে শুনতেই পাননি উপেন বাবু যান তো দেখেন মহারাজা আশে পাশে আছেন কিনা,ডেকে আনুন।নির্মাল্য নারায়ন প্রথম হয়েছে আর মহারাজ আবার ফেল। কিসের যে কমতি তার,রোজ রোজ সিকি আধলি নিচ্ছে কিন্তু পড়ার বেলায় অশ্বডিম্ব।একমায়ের পেটের ভাই নির্মাল্যকে দেখেন পড়ায় ডুবে থাকে সিকি আধলিতে আর মন নেই। যোগেশ বাবু মনে মনে হাসেন। তিনি যে নির্মাল্যের গোপন তথ্যটা জানেন গিন্নিমা টাকা পয়সার হিসাব বোঝেন না।উনার সব টাকাপয়সার সরকার তার প্রিয় সন্তান নির্মাল্য। পড়াশোনা কম থাকায় গিন্নিমা পয়সাকড়ির হিসাবের জন্য তিনি নির্মাল্যকে ডেকে পাঠান সব ছেলেমেয়ের মাঝে তিনি তাকেই যে বেশি ভালবাসেন আর বিশ্বাস করেন। নির্মাল্য ও এই সুযোগটা কাজে লাগায় নিপূন দক্ষতায়।হয়ত পনের টাকা আট আনা গুনলো মাকে বলে এখানে তোর তের টাকা এক সিকি আছে।বাকী টাকা তার পকেটেসরল মা তাই বিশ্বাস করে সিকি পয়সা নির্মালের হাতে দিয়ে ট্রাংকে ঢুকিয়ে রাখে আর নির্মাল্য ও মহাখুশিতে ছুটে যায় গয়নাথের বিখ্যাত বালিশ মিষ্টি খেতে। কিরণবালা সবসময় সেজেগুঁজে থাকতেই ভালবাসে।পাটভাঙা শাড়ি পড়ে রোজ বিশাল কেশ বিন্যাস সেরে বড় করে সিঁদুরের টিপ আঁকে কপালে। সিঁথিতে সিঁদুর টেনে শাখা পালা কপালে ঠেকিয়ে স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করে ঠাকুর ঘরের দিকে যায়।নিত্য পূজার শেষে সুর করে লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ে। ঘন্টা দুইয়ের পূজা শেষ করে বেরিয়ে এসে শুরু হয় প্রসাদ বিতরণ গদি থেকে অন্দর মহল কেউ বাদ যায় না প্রসাদ প্রাপ্তি থেকে। কখনো কখনো অবাক করে গদির ক্রেতাদের জন্যও পৌঁচ্ছে যায় কর্তামার প্রসাদ  


(পরের অংশ আগামী সংখ্যায়)