গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

রুখসানা কাজল





কনফেসন 
 
 মাঝরাতে আজকাল ঘুম ভেঙ্গে যায় ঘুম তেমন হয় না তাই স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্নও দেখে  না সূচিতা কেবল লালকালো পিঁপড়ের মত অতীত আসে। হুল ফোটায়। পিলপিলিয়ে হেঁটে বেড়ায় বিছানা বালিশ নাকে মুখে চোখে। মড়া গন্ধে ভরিয়ে দেয় চারপাশ। ইদানিং ভয় পায় সূচিতাতবে   কি কনফেসনের সময় এসে গেছে? এই কি মৃত্যুলক্ষ্মণ ! এই মধ্য ছেষট্টিতে

         ঘি রঙ জ্যোৎস্না খেলে বেড়াচ্ছে ছাদে জলের গ্লাস হাতে থেবড়ে বসে পড়ে জানালার   পাশে এরকমই একরাতে সে বসেছিল এভাবে বছর তেত্রিশ আগে। মোতাহার এসেছিল একা।  সূচির বেগুনি কাফতান লুটিয়ে পড়েছিল সুখে কবি ও কবিতা মন্থনে পাগল হয়ে মোতাহারের  বুকের উপর মুখ রেখে আকুল কেঁদেছিল সূচি, চল পালাই।” “তোমার ছেলেমেয়ে ?” সশংকিত মোতাহার।আমার জন্যে কে ভেবেছে যে ভাবব ? কে বোঝে বুড়ো ভাম মানুষটার পাশে  সারারাত বালিশ কামড়ে পড়ে থাকার কষ্টকে? আমার আগুন সেতো একাই পোড়ে। কি সুখ একা  পুড়ে !”  
      
       ডোরবেল বেজে উঠেছিল দ্রুত কাফতান পরে দরোজা খোলে তার    ছেলে বছর পনেরোর কিশোর, হাতে গাছপাকা কাঁঠাল।আসি সূচিপা, টুক করে বেরিয়ে যায় মোতাহার। কাঁঠালের গায়ে ছুরি বসাতেই এসে পড়ে লোকটা, তুমি কাঁঠাল ভালবাস তাই নিয়ে এলাম শুভ জন্মদিন রাগে দুঃখে সূচির হাত চলে কাঁঠালের গায়ে আর মন হাঁটে খুনের রাস্তায়। সেই কোন যুগে  কাঁঠাল ভালবাসত  সূচি! এখন  কতকিছু বদলে গেছে। কিছুই কি বোঝে না আবাল বুড়োটা? পুরুষরা নাকি দ্বিচারিণী, তৃচারিনীদের সহজেই বুঝতে পারে! লোকটা কাঁঠাল আর সূচিকে এক ফ্রেমে ফেলে রেখেছে গুয়ের মাছি এরচে আর কি বুঝবে! কুমড়োফুল পেলেও এনে বলত, এক্ষুনি ভেজে দাওতারপর গপগপিয়ে খেয়ে নিত।

       গলা পর্যন্ত খেয়ে ঘুমিয়ে গেছিল লোকটা সূচি জানত ঘুমের ভেতর জল খাওয়া লোকটির একান্ত অভ্যাস মাঝরাতে শুধু একবার বলতে পেরেছিল, আঃ  সূচি ডাক্তার জানালো হার্ট হ্যাটাকবাড়ি ভরে গেছিল কান্নায়, হাহাকারে সূচি খাট ছুঁয়ে থেবড়ে বসেছিল আতংকে কাঁদেনি কাঁপছিল কেবল ছেলের চোখ জ্বল জ্বল  করে উঠেছিল কি এক ভাবনায়
   
        শত ডাকেও আর আসেনি মোতাহারসূচির তখন মুক্তির আনন্দে অমলতাস শরীরবিয়ে করে ফেললো অসম এক তরুণকে। সে বিয়ে ভেঙ্গে গেলে আবার অসম! ছেলেমেয়েরা নানাবাড়ি আঁকড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
 
        পচিশ বছরের সন্তানহীন তৃতীয় বিয়ে ভেঙ্গে সেই ছেলের বাড়িতে উঠেছে  সূচি। ছেলে কথা বলে না। অযত্নও করে না। কেবল মাঝে মাঝে সেই চোখে তাকিয়ে
থাকে। ছেলে কি কিছু দেখেছিল সে রাতে?