গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

নন্দিনী সেনগুপ্ত



ঊন-বাস্তব

-‘ঘুমিয়েছে?’  
-‘হ্যাঁ... অ্যালজোলাম দিয়েছি। উফফ... যা হল আজ!’-- খাটে এলিয়ে পড়ে শমিতা।     
-‘খামকা ফালতু ঝামেলা!’ ... কম্প্যুটার স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়ে বলে সুদীপ্ত।
-‘ফালতু?’ শমিতার কণ্ঠস্বর একপর্দা চড়ে।  
-‘নয়? ফেসবুক ব্যাপারটাই ফালতু। কোথাকার কে - নাম ভাঁড়িয়ে, ফেক অ্যাকাউন্ট। কি? না,- মরা মেয়েকে মনে পড়ে। নাম, চেহারার কিছু মিল আছে। ওটা নিজের ছবি? সার্চে বেরোলো, শ্রীলঙ্কান ফিল্মের নায়িকার ছবি তার   প্রফাইল পিক। যখনই বাবা নেমন্তন্ন করে খাওয়াবার প্রস্তাব দিল, তখনি নাকি তার ক্যান্সার ডিটেকটেড হল। তারপর যেইমাত্র বাবা বলল দেখতে যাবে, অমনি নাকি সপরিবারে বম্বেতে শিফট হল চিকিৎসার জন্য। তারপর কি? না- পটল তোলার একঘণ্টার মধ্যে অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেটেড। অত সোজা?  জ্যেঠু, কাকু- আত্মীয় যারা লিস্টে ছিল, সবকটা শালা ফেক! আর আমার বাবা, কিছুতেই বুঝতে চায়না... আরে, যে মেয়ে নেই, সে আবার মরে কিভাবে?’ ... উত্তেজিত সুদীপ্ত একটা সিগারেট ধরায়।  
-‘শুধু শুধু মুখখারাপ কোরোনা!’... ভ্রু কুঁচকায় শমিতা,... ‘হ্যাঁ, মানছি বাবা বোঝেননি। বোকামো করেছেন। কিন্তু   শারীরিক কষ্টটা তো মিথ্যে নয়। প্রেসার বেড়েছে, সুগার হাই। খাবার আগে আকু-চেকে দেখলাম আরও বেড়েছে। ডাক্তারকাকু ফোনে বললেন ইন্স্যুলিন দুবেলা নিতে’। খাটের উপর উঠে বসে শমিতা।  
-‘এসব সিরিয়াসলি নিলে এটাই হয়! বাবাকে বুঝতে হবে এটা ভারচুয়াল জগত, এখানে বন্ধু হয় না। অসম্ভব’।        
-‘সেটাই বা কি করে বলছ?  কত ভালো, কত গুণী মানুষের দেখা পেলাম ফেসবুকে এসে’।    
-‘আমি পাইনি’।
-‘পাবেও না। তোমাদের তো একটাই খিল্লির গ্রুপ ‘বিশ ফোড়ন’। কথায় কথায় ফোড়ন কাটা আর বয়স্কদের  অসম্মান করা। সেই প্রণববাবু, জিওলজিস্‌ট, বিভিন্ন পাথরের ছবি, গল্প পোস্ট দিতেন; তাঁকে তোমরা ‘পাথরখুড়ো’ বলে কি হেনস্তাই না করলে’!    
-‘বেশ করেছি। ফেসবুক কি জ্ঞান দেবার জায়গা? উইকেন্‌ডে আড্ডা মারব, রিল্যাক্স করব; না... বড় বড় বাতেলা আর ভাট বকা। এদের  দেয় কে?’   
-‘আমি দিই লাইক। ভাল লাগে। রিটায়ার্ড নিঃসঙ্গ মানুষ, ফেসবুকে লিখছেন, সময় কাটাচ্ছেন, অসামাজিক কিছু করছেন না। ভাবো, নাহয় গ্রুপ থেকে চলে গেছেন, যদি অসুস্থ হয়ে পড়তেন বাবার মত, ওনার বাড়ির লোকেরা ছেড়ে দিত? তোমাদের তো আর ফেক অ্যাকাউন্ট নয়!’ যুক্তি সাজায় শমিতা।      
-‘তুমি তো লাইক দেবেই, ভাল সাজতে ওস্তাদ। শ্বশুরের সেবা করে লক্ষ্মী বউ সাজো আত্মীয়স্বজনের কাছে। যতই বাবা মুখে তোমাকে মেয়ের মত মানুক না কেন, মন থেকে মেনেছে কি?... তাহলে ফেসবুকের ফেক মেয়ের জন্য অত  কষ্ট পাচ্ছে কেন? বল, জবাব দাও!’... হিসহিস করে ওঠে পুরুষকণ্ঠ।
রাতের আঁধারে উপচে পড়ে বিষের কলস।  
              [গল্পের ঘটনা ও চরিত্রগুলি সম্পূর্ণ কাল্পনিক । বাস্তবের সঙ্গে কোন সাদৃশ্য নেই]