গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৬

রুখসানা কাজল

সবকিছু ভেঙ্গে গেল
   
              তিনতলা কাঠের গ্যারাজের সামনে দড়ির টুলে বসে তাকিয়ে ছিল সহদেব। সামনে অবারিত সবুজ ক্ষেত। কচি ধানেরা একে অন্যের গায়ে লুটিয়ে পড়ছে বাতাসে।  পলকের  জন্য এক আধবার মাটির  শ্যামাবুক দেখা যাচ্ছে। মনোরম দৃশ্য।  সহদেব তাকিয়ে আছে কিন্তু  দেখছে না। ওর মন উতলা।চোখের সামনে ভেসে উঠেছে  তেলহীন একরাশ রুখুসুখু চুলের ভেতর বিধবা মায়ের ফর্সা মুখ। কোমর ছাপিয়ে  লকলক  করে দুলছে গোছা গোছা কোঁকড়াচুল। ঠাকুমা কাঠের পিঁড়িতে বসে মোটা চিরুণি দিয়ে চড়চড়  করে আঁচড়ে দিচ্ছে আর নিজেদের ভাগ্যকে মনের সুখে শাপশাপান্ত করে চলেছে।  চুল আঁচড়ানোর ফাঁকে এক আধবার  মার মাথার সাদা খুলি দেখা যেত।  সাদা  সিঁথিকে  মনে হত  জমির ভেতর শুয়ে থাকা ফাঁকা আলপথ।

               ঠাকুমার পেছনে বিশাল বাঁশবন। আর বাঁশবনের পেছনে ছবির মতন মন মাতানো   জমিরপর  জমি। বাবার অপঘাত মৃত্যুর পর পুরানো বর্গাচাষীদের  নিয়ে একসাথে কাজ করে মা ঠাকুমাই সব দেখেশুনে রেখেছিল। কিছুদিন হয় সহদেব হাত লাগিয়েছে জমির কাজে।মা ঠাকুমাই ডেকে নিয়েছিল, একজন পুরুষ মানুষ হাতের পাঁচ না হলি কি চাষাদের সাথে পারা যায়! সহদেবেরও পড়াশুনা ভাল লাগছিল না। ব্যস জুটে গেল সে মা ঠাকুমা জমি আর ফসলের সাথে।

পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বড়দা মেজদা  শহরে থেকে  পড়াশুনা করত। স্বচ্ছলতার অভ্যাসে তারা গ্রামে আসতে চাইত না বেশি।ফলে তাদের জন্যে চাল ডাল তেলের সাথে নগদ টাকা পাঠাতে হত মাস গেলেই। বড়দা  শহুরে জীবনকে আপদমস্তক গ্রহন  করে নিয়েছিল। বলেই দিয়েছিল সে গ্রামে থাকবে না। বিয়েও করবেনা গ্রাম্য কোন মেয়েকে। মাঠাকুমা বুঝেছিল বড়দা তার উকিল বন্ধু্র বোনকে বিয়ে করে শহরেই থাকবে। কেউ কোন আপত্তি করেনি। জ্যাঠা মশাই  বলেছিলেন, আপত্তি করলেই কি  শুনবে? শুধুমুদু মান সন্মান খোয়ানোর কি দরকার।

             মেজদা ছোটবেলা থেকেই ধূর্ত। বাবা তো প্রায়ই রেগে মেগে বলত ওটার নাম শকুনি রাখলে ভাল মানাত। লম্বা ফাজিল ছেলে। ওর হাতে সম্পত্তি গেলে   ভিক্ষার থালা হাতেরাস্তায় নামতে হবে সকলকে ।  ইয়ার দোস্তোদের সাথে মস্তি করে টাকা  উড়ানোই ছিল  মেজদার প্রথম কাজ। এর জন্যে যখন তখন টাকা চাইত। না দিলে  ঘরের টিন, ধান চাল পুকুরের মাছ বিক্রি করে দিত শহরে বসে থেকেই। মারধর  বকাঝকায়  মেজদার কিছু হত না। জেঠু বলতেন হারামজাদা বিলাইয়ের স্বভাব পাইছে ।
             সেবার অঘ্রাণে বাগচী অপেরা নতুন পালা নামিয়েছিল “আলেয়া”। জব্বর হিট চলেছে। আলেয়ারূপী মঞ্জুশ্রীর নাচ গান অভিনয়ে নারী পুরুষ সবাই মুগ্ধ। বাবা জেঠু কাকারা এই  নিয়ে পাঁচদিন আলেয়া দেখেছে। মা ঠাকুমাসহ  তাদের বাড়ির জ্ঞাতিগোষ্ঠীও মুড়িমুড়কি, নাড়ু, বিস্কিট আর ফ্লাস্কে চা নিয়ে দুদিন দেখে এসেছে মঞ্জুশ্রীর অভিনয়। ছোট কাকিমা তো আলেয়ার গান মুখস্থ করে ফেলেছিল। যখন তখন গেয়ে উঠত!

বড়দা মেজদা জিন্নাভাই ফারুক ভাইরা রোজ যাত্রা দেখে।  ওরা  থাকে প্যান্ডেলের শেষ দিকে বাবা কাকাদের চোখের আড়ালে। ওখান দিয়েই অভিনেতা অভিনেত্রী নর্তকীরা মঞ্চে ছুটে আসে। দাদারা গাঁজা মেশানো সিগ্রেট খায় আর   প্যান্ডেলে  আসা সুন্দর সুন্দর মেয়েদের দেখে আওয়াজ দেয়। অনেকেই দেখেছে  জিন্নাদা আর মেজদা  যাত্রা্পার্টির  ছেলেমেয়েদের সাথে  বাংলা টানে আর হুলোড় করে। বাবা জেঠুকে বলেছে, যেকোন দিন  সুবলরে নিয়ি বসতি হবেনে দাদা।    শূয়োরটা পাক্কা ফক্কড় হয়ি উঠিছে দিনকে দিন।”ঠিক হয় যাত্রাপালা শেষ হলেই সুবলকে কড়া টাইট দেওয়া হবে।

             বাবা জ্যাঠা কাকারা আবার আলেয়া দেখতে যাচ্ছে । বাবার হাতে সাত ব্যাটারির  ঝকঝকে টর্চ। মা জেঠিমা কাকিমা মাঝে মাঝে উঠতে বসতে ঠেস দিচ্ছে, ঘুমের মাতালে ভোর রাতি দরোজা খুলতি পারবনা কলাম! মঞ্জুশ্রীর আঁচলের তলি  মাথা রাখি ঘুমায় থাকলিই ত হয়! ছোটকা ছিল বেশী  চালাক। ছোটকাকিমা প্রাইমারী ইশকুলের শিক্ষিকা। প্যাচের প ও  জানেনা। প্রথমদিনই  আলেয়ার শাড়ী দেখে বলে রেখেছে, ওই শাড়ি চাইইই চাই।  অন্যসময় খ্যাচ করে  উঠলেও ছোটকা একবারে রাজী হয়ে যায়। অফিসের বন্ধু আকবরকে হাসতে হাসতে বলে, আরে অই শাড়ি পালি ত কেনব। রাজী হলাম ত  মঞ্জুশ্রীরে দেখতি।”  ছোটকাকে দুই বেলা শাড়ির কথা  মনে করিয়ে দেয় কাকিমা।  ছোটকাও হ্যা হ্যা করে, শুনুরে শুনু, দরকার হলি আমি প্যারিস থেকি তোরে অই শাড়ি আনি দিবানি। মঞ্জুশ্রীর কসম।  ছোটকার ডায়লগ শুনে  বাবা জেঠা  বিষম খায়। ঠাকুমা শাসায়, দূর দূর শয়তানের ঝাড়। সরল মাইয়াডারি ঠকালি কিন্তুক খপর করি দিবানি তোগের কয়িদিলাম।

            বাড়ির দুই মাইল পেরিয়ে শিবঠাকুরের  এক থান। বট অশত্থ পাকুড়ে প্যাচ খেয়ে একসাথে উঠে গেছে আকাশ ছেয়ে। পূজা আচ্চাও হয়। খুব জাগ্রত থান। গল্প করতে করতে থান পেরুচ্ছে এই সময়ে আর্তনাদ করে উঠে বাবা, দাদারে লতা আমারে কাটিছে। বান দে বান দে শীগগিরি!আমারেবাঁচা দাদা।ধপধপ করে  সবগুলো টর্চ জ্বলে  উঠে। মাটি থেকে অনেকখানি মাথা উঁচু করে দুলে যাচ্ছে লতা।সাত ব্যাটারির টর্চ দিয়ে বাড়ি মারতে মারতে পাগলের মত বাবা চেঁচায়, তোরে মারিই  মরব।আমি কি তোর পর আছিলাম রে শয়তান!” মন ভিজে উঠে সহদেবের। মরার সময় মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়েস ছিল বাবার।  শত চেষ্টা , হাহাকার, বিলাপ পেছনে  ফেলে দুদিনের ডাক্তার বদ্যি ওঝাকে ফেল করে দিয়ে মরে গেল বাবা। মনে আছে  দাহ হয়নি বাবার। নদিই নিয়েছিল বাবারে।

            বড়দা এসেছিল। মাথা ন্যাড়া করে ফিরে গেল। মেজদা  জাঁকিয়ে বসল তার সম্পত্তির ভাগ চাই। ভাগ নিয়েই চলে গেল। বড়দা সম্পত্তি নিল না কিন্তু সংসারের দায়ও নিতে চাইল না। সেই সময়  এগিয়ে এলো বাবা জ্যাঠার বন্ধুহাবিবচাচা। সব রকমের সাহায্য দিয়ে ঠাকুমাকে বলে দিল যেমন চলছিল সংসার তেমনই চলবে। আপনি চিন্তা করবেন না মা।

           সহদেবের  বিয়ের দু বছর বাদে মেজদা একরাতে এসে হাজির। সহদেবের বউকে সোনার আংটি দিয়ে বলেছিল, জমপেশ করি রান্ধো ত বোউমা। বালছাল খায়ি মুখ মরি গেছে। তারপর মাকে ডেকে বলেছিল, ওমা তোমার ঘরে ঘুমাতে গেলাম। রান্ধা হলি  ডাকি দিও । খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরদিন সকালে চলে গেছিল। খালি হাতে এসেছিল আবার খালি হাতেই চলে গেল।

            পরের  মাসে দুই গ্রাম দূরের হাবুল মন্ডল বাড়িতে এসে জানালো সে বাঁশবাগান থেকে শুরু সব আবাদি জমি কিনে নিয়েছে সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।  জমি পর্চা সব আসল। বিক্রি করেছে সুবল দাস এবাড়ির মেজোছেলে। বড়দাও ছুটে এসেছিল।কিন্তু উকিল হয়েও কিছু করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত হাবিবচাচার শালিসে  হাবুল মন্ডল জমি ফিরিয়ে দিতে রাজী হয় কিন্তু তাকে তো  তার টাকা ফেরত দিতে হবে। কোথায় পাবে অত টাকামেজদা তখন নাগালের বাইরে। নেপাল ঘুরে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে।
                বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে যে পরিবারে কখনো অভাব দেখা যায়নি আজ সে পরিবার অভাব অনটনের সামনে ভেঙ্গে পড়ে। মধ্যবিত্তের যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে বউ আর দু ছেলেমেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির আশ্বাসে চলে আসে এপারে। এখানে কামলা খাটলেও লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। সত্যিকার ভাবেই কামলা খেটেছে সহদেব। কলকাতা থেকে  বহুদূর রেলের জমিতে ছাপরা তুলে থেকেছে বছরের পর বছর। সারাদিন জমিতে  কাজ করে রাত গভীর হলে ছাপরা ঘরের গুমোট ছেড়ে রেলরাস্তার ওপারে বিস্তৃত জমির দিকে তাকিয়ে বসে থাকত। সহদেবের কথা কম। বউ এই বিদেশেও কিছু মানুষের সাথে ভাব করে নিয়েছে। তাদের গল্পের বিষয় ছেড়ে আসা স্বদেশের একটুকরো উঠোন, একটি ছোট্ট পানাপুকুর, খেয়েপরে চলার মত ক্ষেতি জমি আর বংশ বংশ পরম্পরায় গড়ে তোলা ভিটেমাটি ঘর, উড়ে আসা কবুতরের সাথে কাক চড়ুইয়ের ঝগড়া, ক্ষেত থেকে তুলে আনা তরিতকারির তাজা সবুজ ঘ্রাণ, আকাশ বাতাস জুড়ে মন মাতানো কত রকমের গান ! বউয়ের গল্পে আস্তে আস্তে মিশে যায় এখানকার সিনেমা দেখা, হিং, পোস্তবাটা, দল বেধে বেড়ানো। কিন্তু  সহদেবের কোন গল্প নেই।  কাজের কথা ছাড়া সে আর কোন গল্প জানে না। প্রতিদিন ভোরে পুব আকাশের দিকে একটি প্রণাম সে রেখে দেয়। মা ঠাকুমা মারা গেছে। ভাইদুটোও  চলে এসেছে এপারে। বাংলাদেশের ঘরবাড়িতে  এখন মেজদা থাকে। 

               কুড়ি বছর বাদে বউ নিয়ে বাড়ি এসেছিল সুবল।  সাথে দুই বাচ্চা। কেউ ঠাঁই  দিতে রাজী হয়নি। সুবল বউকে বলেছিল আমি যা করিছি তাতি ক্ষমা আমি পাইনা।  আশাও করিনা।  আমার  আর ক্ষমতা নাই। থাকতি পারলি থাক । না পারলি চলি যা। আমার মনে কোন বাঁধন নাই জানিস তুই।” বউ ভালই জানে।  কাচারি ঘরে দুদিন অনাহারে  থেকে বউ নেমে এসেছিল বাচ্চাদের জন্যে জেঠু কাকাদের সংসারে কাজ করতে।  যতদিন মা বেঁচে ছিল কথা বলত না ওদের কারো সাথে । মৌনব্রত নিয়েছিল মা। সারাদিন ঘরের  বারান্দায় বসে বাঁশঝাড় আর তার পেছনে ফসলের ভারে নুয়ে থাকা থরে থরে সাজানো জমি দেখত। মরে যাওয়ার আগে বলে গেছিল সুবল যেন তার দাহ কাজে না আসে। বাড়িঘর জমি  লিখে দিয়েছিল সুবলের বউয়ের নামে। হাবিবউল্লা কাকার ছেলে নবি শেখ গ্রামের  চেয়ারম্যান । তার কাছে দলিল জমা রাখার দায় দিয়ে নিরাসক্ত অমায়াবী মুখে  মা বলেছিল, নবি তোর ত অজানা নাই কিছু। সুবলে য্যান আর কেউরে ভিটে ছাড়া না  করতি পারে সে দায় আমি তোরে দিলাম। তোর ধর্ম সাক্ষী।” নবির জন্যেই আজ মেজদার ছেলেমেয়রা পড়াশুনা করছে। মেজদা ঝুলে আছে ভাঙ্গা কব্জার মত । দরকারে বে দরকারেও যার কোন মূল্য নাই।  কেবল ঝনাৎ  করে একটু শব্দ হয় ।

             দেশে যাওয়ার কথা আর ভাবে না। এখানে ভালই আছে এখন। সহদেবের গ্যারেজের নাম ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশে গ্রামে। ভাড়া সে চায় না কারো  কাছে। যারা সাইকেল রাখে তারাই ভাড়া ঠিক করে তুলে দেয়। জ্যৈষ্ঠের গরমে হাত পাখার  বাতাস নিচ্ছে গ্যারেজে বসে একজন ভাল পোশাকের সুন্দরপানা মানুষ হেঁটে এসে  হঠাত জিগ্যেস করে, কিরে কেমন আছিস নুটু?  এই আছি, ভাল আছি, আর  থাকা---উদাস  উত্তর দিয়ে মোটাসোটা  সহদেব জোরে পাখা ঘুরায়। এখানে তার জেলার অনেকেই আছে । গ্রাম ফাঁকা করে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা চলে আসছে।  তাদেরই কেউ হবে হয়তবা। বউদি কি রান্দিছে রে আইজকে?  তোর সাথে দুপুরে  ভাত খাবো, এই  বসলাম--- এবার চমকায় সহদেব।  তাদের গরীবগুবরো চাষাভুশোদের পোশাক ত এমন নয়। তাছাড়া এমন টকটকে রঙের সাহেবি স্বচ্ছল মানুষ এখানকার হাতের বগলে দেখা যায়না সচারাচর। কিরে চিনিছিস ? মাথা নেড়ে না  বলে সহদেব।  ভবেন  পন্ডিতের পাঠশালা! এবার ঘুরে সামনা সামনি বসে  সহদেব। চশমা খুলে হাসছে মানুষটা। সহদেব কিছুতেই চিনতে পারেনা। ভবেন পন্ডিতের পাঠশালায় তারা অনেকেই পড়াশুনা করেছে। কিন্তু সে ত ছিল বালকবেলা। তালের পাতায় কয়লাকালিতে লেখা অ আ ক খ র কুসুম সময়। ভবেন পন্ডিত  কিছুতেই কাগজ কলম ধরতে দিত না। কারো কাছে কলম পেলেই বেধড়ক মার দিত। এই পরিণত মুখের বন্ধুতা ধরে রাখা হাসিমুখের  মানুষটি কি সেই পাঠশালার কোন বালক? কিন্তু কে ?

                  শেষ বিকেলে দুজন হাঁটতে হাঁটতে রিকশা স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায়। অমলের পাকাধান গায়ের রঙ্গে বিকেলের আলো ঠিকরে পড়ছে। সহদেবের ইচ্ছে  করছে না বন্ধুকে ছাড়তে। সহদেবের উদাস নির্লিপ্ত বুকে ঢেউ তুলেছে বন্ধুসুগন্ধ । সেই  তালের ডিঙ্গি, পাকা খেঁজুর কুড়ানো সকাল, সেই সরকারী ইশকুলে লালসবুজ পতাকার সামনে, আমার সোনার বাংলা গাওয়া দিন ! জোর করে রিকশা ভাড়া দিয়ে দেয় সহদেব । অকালবৃদ্ধ, ক্লান্ত, ভাবলেশহীন, ভাগ্যের বাহাতের পুতুল সহদেবকে  জড়িয়ে ধরে অমল। কোথাও ঝর্ণা পতনের শব্দ হচ্ছে ! হাজার হাজার লক্ষকোটি ঝর্ণা মূক পাথরের গায়ে সশব্দে ভেঙ্গে পড়ছে----