গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

পলাশ কুমার পাল

কৃপন মৃত্যু

     
হাতের গিঁট গুণতে থাকে বিমল। আর মাত্র চারদিন। কলেজের বেতন না দিতে পারলে রাজেশের পরীক্ষা দেওয়া হবে না। নিজের ছেলের পড়াশোনার খরচ না যোগার করতে পারলে তো সে অযোগ্য বাবা। একেই অফিসে কেরানিগিরি করে সংসারের খাওয়া-পড়াই ভালোভাবে করতে পারে না। অনেক দেনা। আবার বেতন পেতেও এখন অনেক দেরি। কেউ ধারও দেবে না।
ছোপধরা, নোনালাগা, জীর্ণ পুরানো বাড়ির ধ্বংসস্তূপ মনে হয় নিজেকে। অসহায় মনে হয়।

মানসিক চিন্তা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বিমল নিত্য সহযাত্রী প্রমোদের কাছ থেকে খবরের কাগজটা নিয়ে চোখ বোলাতে থাকে। আজকাল আত্মহত্যার খবরে সে বেশি মনোযোগী। এছাড়া দুর্ঘটনা, খুন প্রভৃতি মৃত্যুর খবরে নিজের ছায়া দেখতে পায়। অনেকটা জলেতে নিজের ছায়া, জল না ছুঁয়ে।
তার কেন মৃত্যু হয় না? -এই প্রশ্নই নিজের চারপাশে প্রতিধ্বনি হয় কাগজের শব্দগুলো থেকে। অথচ সে নিজেও মৃত্যুবরণ করতে পারে না বারবার মরেও। কারণ সংসারের দায়। মৃত্যুও কি তবে দালালি চক্রান্তে আবৃত?

খবরের কাগজের পাতা থেকে যখন সে মৃত্যুর ব্যঞ্জনে বুঁদ, তখন তার পায়ে একটা হাতের স্পর্শে আবার তাকে ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে ফিরিয়ে আনে।
'বাবু, কিছু দে বাবু! সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি!'

জীর্ণবস্ত্র পরিহিত এক মহিলা ছোট্ট একটা শিশুকে নিয়ে হাতের তোবড়ানো থালাটা বাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েকটা পয়সা তাতে নড়ে উঠছে মাঝে মাঝে। শিশুটাও হাত বাড়াচ্ছে। শিশুটাও দুদিন বাদ ভিক্ষা করবে?

এটা কী জীবন? এও যেন এক মূমূর্ষ ছবি মনে হয় বিমলের। যার খবরের কাগজে স্থান নেই। স্থান নেই মৃত্যুতেও। তবু তারাও যেন ভিখারির গভীরে ভিখারি। মৃত্যুর কৃপণতাকে ভাঙতে চাইছে!
ছোট্ট শিশুটার ফ্যাকাসে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে বিমল। ট্রেন দুলতে দুলতে তখন ছুটছে...