গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

সোনালি ভট্টাচার্য মুখার্জী

একটা বাজে মেয়ের গল্প


মেয়েটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকত। বসে ও থাকত অনেক সময়।পাঁচিলের ওপরে বসে বসে পা দোলাতো,আর অলস ভাবে ঘাড় ঘোরাতো এ দিক ও দিক।ট্রাফিকই দেখত ফাঁকা সময়ে। চেতলা ব্রিজের পাঁচিল তো।সামনেই অনেক ট্রাফিক। খদ্দের এল ত ভাল।দুটো পয়সা পাওয়া। কিন্ত দুটো এই পয়সার জন্য যা খাটুনি। বাবা। মাঝে মাঝে মনে হয় আজকের দিনটা খদ্দের না এলে বাঁচি। আবার নিজেই পা দোলাতে দোলাতে মুখ বেঁকায়। হ্যাঁ,গতরে হাওয়া লাগিয়ে আরাম কল্লে খেতে দেবে কার শাঊড়ি, হুঁঃ তবু রাস্তায় বসে থাকা ভাল। খোলা হাওয়া। মানুষজন।গাড়ি ঘোড়া।এইখানে কলকাতা সুন্দর। তার বনগাঁ বর্ডারের টালির চাল,আর কাদা মেখে খেতে ধান রোয়ার চেয়ে সুন্দর। সামনে হেই দেখো বিশাল কাপড় না কাগজ টাংগানো। সেদিন একটা বাবু কাস্টমার বল্ল হোডিন।সেই খানে করিনা কাপুরের যা হেব্বি ছবি না একটা। কি লাল লিপিস্টিক,চোখে লাইনার,বুকের খাঁজ দেখাচ্ছে কায়দা করে। বেশি রেটের মেয়েরা দরোয়ানকে দিয়ে আনিয়ে ভিডিও দেখে। আবার সকালে কেবলেও সিনেমা দেখায় মাঝে মাঝে বাড়িউলি বুড়ি।মেজাজ ভাল থাকলে। সেই করেই সিনেমার লোকেদের নাম ধাম চেনা। ঘরে ঢুকলে তবেই রোজগার। নাহ,একা ঢুকলে হবে না।খদ্দের কে লিয়ে ঢুকতে হবে।যার যত বেশি খদ্দের তার তত পয়সা। 

দমবন্ধ হয়ে আসে এক ফালি কুঠুরিটাতে ঢুকতে। মাথা নামিয়ে কোন রকমে ভিতরের খাটে ডাইভ মারা। একটু নড়াচড়া করার ও জায়গা নেই। সে কপাল করে আসেনি মেয়েটা। নেহাত গরিব চাষা বাড়ির মেয়ে।মুখখানার বিশেষ ছিরিছাঁদ নাই।শরিলটা আঁটোশাঁটো দেখেই চিড়িয়াখানায় বাড়ির লোকের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় হারামি হরিদাস ওকে পটিয়ে এনেছিল। সে কোন ছেলে বেলার কথা। খদ্দেরের ঘরে ঢোকাতে কি মার কি মার।আবছা আবছা মনে পড়ে একা বসে থাকলে।কারো ইচ্ছে করে ওই চোরাকুঠুরিটাতে ঢুকতে? খদ্দের গুনো ও কি বাবা! চারটে দেয়াল আর একটা চিত করে ফেলবার তক্তা হলেই হয়ে যায়? না।সবাই এরম নয় অবস্যি।দেখো না, আশে পাশে কত এসি ফ্ল্যাট ও হয়েচে আজকাল।পয়সা ফেলো আরাম কর।উঁচু লজরের লোক ও আছে। তবে তারা এরম খেঁদাবোচা মুখ,খসখসে মেয়ে মানুষকে পয়সা দেবে না।কত ইংরিজি বলা নেপালি পাঞ্জাবির দল পয়সা পিটছে এন্তার। যাকগে। ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দার্শনিক হয় মেয়েটা। ওই হোডিন বলতে শিখিয়ে যাওয়া বাবুটাকে সেদিন বেশ দিয়েছি। মাল খেয়ে ত আউট। কিসুই বিশেষ করতে পারেনি।খালি বুকনি। নিজের সম্মান নিয়ে ভাব? নিজেকে মেয়ে বলে সম্মান দাও,ভ্যানোর ভ্যানোর ভ্যানোর। অনেক শুনে আর থাকতে পারিনি। বল্লাম,বাবু, যদি পঞ্চাশ টাকা ঘন্টা না লিয়ে নিজের দাম বাড়ানোর রাস্তা থাকত তবে লাখ টাকা ঘন্টা নিতাম। বলে,আহ এটা একটা কথা? একটু উপরে ওঠার কথা ভাবতে পার না? বোঝো কথা। বল্লাম, সেই ত ভাবছি। লাখ টাকা ঘন্টা নিলে তোমরা আমার নাম দিতে করিনা কাপুর।তখন আমার খালি গায়ের ছবি হোওই সে হোডিন এ চিত হয়ে দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে। 

কেমন চমকে তাকিয়ে রইল লোকটা।তারপর ব্যাগে যত যা ছিল বের করে আমার হাতে গুঁজে দিয়ে মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেল। চড়থাপ্পড় ও মারেনি,চুল টানেনি, কিচ্ছু না। মাসিকে বলিনি। অনেকগুলি টাকা। নাহ।ভগমানের মাঝেমাঝে বোধহয় আমাদের কথাও মনে পড়ে যায়।