শেয়ালেরা ফিরে এল
শ্রীরা তিন ভাই বোন। দিদি বড়,ভাই ছোট।গরমকালে রাতে ঠান্ডা মেঝেতে
বিছানা পেতে মা-বাবার সাথে সবাই একসাথে ঘুমোত।মার বড় সন্তান বড় আদরের তাই মার
কোলটা দিদির জন্যই ছিল বরাদ্দ।পাঁঠা মানত করে ছোট ভাইটা মা-বাবার কোলে এসেছে তাই
বাবার কোলটা ছিল ভাই-এর জন্যই বরাদ্দ।শ্রীর জন্য আর মা-বাবার কোল খালি থাকত না তাই
সবার একেবারে মাঝখানটিতে শুতো শ্রী।রাতে মা রোজ গল্প বলতেন,শুনতে শুনতে তিন ভাই বোন ঘুমের দেশে চলে যেত।একই গল্প অনেকবারই ঘুরে
ফিরে আসত তাও অন্ধকার ঘরে মার জাদুমিশ্রিত বাচনভঙ্গিতে মুগ্ধ হয়ে শুনত
তিনজনে।এরকমই এক গল্প ছিল শেয়ালের বাচ্চা চুরির গল্প।যে বাচ্চারা মার কাছে রাতে
শুত না শেয়াল বেছে বেছে তাদেরই ধরে নিয়ে যেত।রোজ রাতে একটা বাচ্চা ছিল তার
খাদ্য।শ্রীরা যে ঘরে শুত তার পাশেই ছিল খুব ছোট্ট একটা লাগোয়া ঘর যাতে কাঠের
পাল্লা লাগানো একটা জানলা,তাতে লম্বালম্বি মাত্র দুটো শিক
লাগানো।প্রচন্ড গরমে ওই জানলা খোলাই থাকত। তার পাশেই ছিল রাস্তা এবং রাস্তার ওপারেই
ঘন জঙ্গল।দূরে প্রহরে প্রহরে অনেকগুলো শিয়াল ডেকে উঠত একসাথে।এই শিয়ালের ডাক
শুনলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত শ্রীর।ভয়ের সাথে সাথে একটা রোমাঞ্চও হত । ভয় হত সে তো
মার কোলের মধ্যে নেই,শিয়াল যদি বুঝতে পেরে ওই জানলা গলে
ভেতরে এসে চুপি চুপি শ্রীকে ধরে নিয়ে যায়!তারপরই ভাবত না না, তা কি করে হবে । মার কোলে না শুলেও সে তো সব্বার মাঝখানেই শুয়ে আছে তাই
সেই সবচেয়ে নিরাপদ।স্বস্তি পেয়ে আসতে আসতে ঘুমিয়ে পড়ত শ্রী।
দুই কন্যার মা শ্রী রাতে পাল্টে পাল্টে দুজনকে জড়িয়ে ধরে
ঘুমিয়ে থাকে। তার সন্তানরা কোন শেয়ালকে ভয় পায় না কারণ জঙ্গলহীন শহর এখন বনের
হিংস্রপ্রাণী মুক্ত।কাচের জানলা জুড়ে থাকে রাস্তার হ্যালোজেনের প্রকট আলো, সে জানলা দিয়ে বাইরে চোখ রাখলে এতটাই পরিস্কার দেখা যায় সব কিছু যে
কল্পনার কোন অবকাশই থাকে না।রোমাঞ্চহীন দুই রোবটবালিকা সারাদিনের ইঁদুর দৌড়ের পর
অক্লান্ত ঘুমে ঢলে পড়ে এমনিতেই।তাদের কোন গল্প শোনারও প্রয়োজন পড়ে না। ইদানীং খবরে
শোনা যাচ্ছে কলকাতা শহরে আবার নাকি একপাল শেয়ালের আবির্ভাব হয়েছে । উঠতি শেয়ালেরা
মার বুকের মধ্যে থেকেই নিঃশব্দে বাচ্চা চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছে।ভয়ে বুক শুকিয়ে আসে
শ্রীর।জোরে আরও জোরে দুপাশে দুই মেয়েকে চেপে ধরে ঘুমের মধ্যে চমকে চমকে ওঠে।
