একান্তে
লালমাটির দেশে প্রত্যন্ত একটি গ্রাম
।সাঁওতাল ও আদিবাসী দের বসবাস বেশীর ভাগটাই।কিছু সম্পন্ন কৃষক আর সভ্য মানুষের গুটিকতক
ঘর বাড়ি।ছোট্ট নদী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে । একপাশে ঘন জঙ্গল ।শাল পিয়াল সেগুনের
বিশাল বিশাল গাছ ।
একদম ছবির মতো।একদিকে রেল লাইন । ছোট্ট একটি প্লাটফর্ম ব্রিটিশ আমলের ।সারাদিনে দু
তিনটি মালগাড়ি আর পাঁচ ছয়টি বগী নিয়ে
passenger ট্রেন দু একখানি যাতায়াত করে ।যাত্রী সংখ্যা খুবই কম।দু
চার জন নামা ওঠা করে । কোন মেল ট্রেন দাঁড়ায় না । সারাদিন ফাঁকা শুনসান। এক ধারে অনেক কালের পুরনো এক বিশাল বটগাছ ঝুরি নামিয়ে আপনমনে দাঁড়িয়ে
আছে । তার নীচে অন্ধ গায়ক একমনে গান গায় । কোন পথচারী ইচ্ছে হলে দুএকটা পয়সা তার হাতে তুলে দেয় ।
এই
প্লাটফর্মটি বিকেলের দিকে অনেকেই বেড়াতে আসে।বাইরের জগতের সংগে একমাত্র যোগাযোগ এই
প্লাটফর্ম । এখানে সকলের সঙ্গে দেখা গল্প নানা রকম খবরের আলাপ আলোচনা হয় । খবরের কাগজ এইখানে সবাই কেনে । পড়ে । দেশের বিষয়ে রাজনীতির
বিষয়ে বেশ তর্ক বিতর্ক
ও হয়।মজলিসি মেজাজে সবাই খুব সুন্দর সময় কাটায়।তাই আদিবাসী ছাড়াও গ্রামের বিশিষ্ট মানুষেরা
বৈকালিক এই আড্ডা টি খুব এনজয় করে ।
।
ছোট হেল্থ সেন্টার এর সিস্টার
মৃন্ময়ী দত্ত
রোজ এখানে
এসে একা চুপ করে বসে থাকেন অনেক ক্ষণ। উঁচুনিচু জমির ওপারে
সূর্য যখন অস্ত যায় ধ্যান মগ্ন হয়ে শান্ত পবিত্র মনে যেন কতো কী ভাবেন । সবাই এই দৃশ্য দেখে আর সিস্টারের প্রতি শ্রদ্ধা ভরে তাকিয়ে
থাকে । অন্ধকার গাঢ়
হলে আস্তে আস্তে কোয়ার্টার
এর দিকে পা বাড়ান । সবাই প্রণাম জানায়। উনি মৃদু হেসে
প্রতি নমস্কার করেন।
প্রায়
দশবছর উনি এখানকার ছোট্ট হেল্থ সেন্টারটিতে আছেন । কোন ছুটি নেন না।কোথাও যান না।কেউ
আসে না।আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধব কেউ না । একলা কী কারনে এই গন্ডগ্রামে পরে আছেন কেউ জানে না।এখানকার মানুষ
জন খুব ভদ্র।কোনও কৌতুহল নেই কারোর । দিদিমনী আছেন বলেই গ্রামের মেয়েরা সুস্থ থাকে । প্রত্যেকের
প্রতি সমান যত্ন করে অসুখে বিসুখে দেখেন।প্রসূতি মায়েদের সেবা করে সুস্থ সন্তান সহ মাকে নিজে বাড়ি
পৌঁছে দিয়ে যান। এখানকার আদিবাসী মেয়ে রা দিদিমণি কে দেবতার
চোখে দেখে।তার কোয়ার্টার পরিস্কার, রান্নাবান্না সব জোর করে
ওরা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে।মৃন্ময়ী
ওদের ভীষন স্নেহ করে ভালোবাসে।গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার অনিয়মিত মাঝে মাঝে
আসেন।মৃন্ময়ী দত্ত ই সর্বেসর্বা । কয়েকটি সাঁওতাল মেয়েকে নিজের হাতে নার্সিং শিখিয়ে সহযোগী করে নিয়েছেন । তাই স্বাস্থ্য কেন্দ্র
টিতে আশেপাশের গ্রাম থেকেও রোগী আসে । সারাদিন সেবা শুশ্রূষার মাঝে নিজেকে জড়িয়ে রেখে আত্মতৃপ্তি পান।
শুধু বিকেলে এই প্লাটফর্ম টিতে কিছু সময়ের
জন্য নিজেকে একান্তে রেখে কিছু চিন্তা করেন।
একদিন চৈত্র মাসের সন্ধ্যা । দখিনা বাতাসে
চারিদিকে যেন খুশির ছোঁয়া । সিস্টার গাছের তলায় বসে একমনে দূরের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন
।
হঠাত অঘটনের মতো একটি মেল ট্রেন এই অখ্যাত স্টেশনে থেমে
গেল ।
কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য । এতো
বড়ো ট্রেন এখানকার মানুষ রা তো দেখে নি আগে । অবাক
হয়ে তারা সুসভ্য যাত্রীদের
দিকে তাকিয়ে রইল ।কেউ নেমে চা চা বলে চীৎকার শুরু করে দিল । কেউ কেউ নেমে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তারিফ করতে লাগল । একটা অদ্ভূত বেসামাল অবস্থা । হৈ চৈ
দেখে মৃন্ময়ী ও অবাক
হয়ে ধ্যান ভুলে এইসব
দেখতে থাকলো।হঠাত একজন সাহেব মতো লোক অবাক হয়ে বললেন মিনু না ?
তুমি
এখানে কিকরে? কেন ? কেমন করে ? মৃন্ময়ী হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
।তুমি সোমনাথ ?এখানে কি করে এলে? কবে ফিরলে তুমি ? মৃন্ময়ী।একসঙ্গে হুড়মুড় করে অনেক
কথা জিগেস করে ফেলে।সোমনাথ আমতা আমতা করে বলে তোমাকে অনেক অনেক খুঁজেছি মিনু।কেউ আমাকে
তোমার খবর দিতে পারে নি।অনেক অপেক্ষাকরে করে এই বছর বিয়ে করে ফেললাম মিনু।দিল্লীতে
এখন আছি।বউ দিল্লীর মেয়ে।তিনমাস পরে আবার স্টেটে চলে যাবো।তুমি কেমন আছোমিনু? হাতটা জড়িয়ে ধরতেযায়। এমন সময়
জোরে ট্রেনেরহুইসেল বেজে উঠলো।সেই তীব্র আওয়াজ ওদের হুঁশ ফিরিয়ে দিল।দুজনে একভাবে
দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকল।ট্রেনের জানালা থেকে একটি সুন্দর
মুখ ডেকে উঠলো এই তাড়াতাড়ি উঠে পড়
ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।অপ্রস্তুত সোমনাথ বলে ও টিয়াআমার বউ।খুব ট্যালেন্টেড।মিনু তুমি বিয়ে কর নি? মিনু খুব আস্তে আস্তে বলল তোমার ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে সোমনাথ ।চলন্ত ট্রেনে উঠতে উঠতে সোমনাথ চীৎকার করে বলতে থাকে তুমি বললে না মিনু।মেল ট্রেন সশব্দে
জোরে হুইসেল বাজাতে
বাজাতে অদৃশ্য হয়ে গেল ।মিনু ঐ গাছের তলায় হাঁটু মুড়ে চোখে দুটি হাত চাপা দিয়েবসে পড়লো।পুরো শরীরটা কাঁপছে
।স্থানীয় সবাই চুপ করে দেখে।মনে সবার বিষন্নতা।দদিমণি
র অতীত আছে।সেটা কি জানা গেলো না ।কিছু দুঃখ যে আছে তা সবার কাছে পরিস্কার হয়ে গেল
।
ঐ সাহেব মতো লোকটিকে নিয়ে সবার একটু কৌতূহল
হলো।কে লোকটি।সঙ্গে
তো সুন্দরী বউ রয়েছে।দিদিমণির কোন কাছের লোক ?
রাত
নেমে এলো।সবাই চুপ করে বসে আছে।ফুলমনি এসে দিদিমণি র মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো উঠ সিস্টার মুরা তো আছি তুই
কান্দিস না ।মৃন্ময়ী উঠে দাঁড়ালো।এতোদিন যে আশা
মনের মধ্যে লুকিয়ে ছিল আজ সব শেষ হয়ে গেল ।
মেঠোপথে
যেতে যেতে তার শৈশব কৈশোর ভেসে এলো চোখের সামনে ।তার সেই ছেলে বেলা তার
সেই কৈশোর শুধু
সোমনাথ কে ঘিরে ।ওরা ব্রাহ্মণ ।মৃন্ময়ী কায়স্থ।যখন দুজনে পরিবারের
অমতে রেজিস্ট্রি বিয়ে করার জন্য মরিয়া ঠিক সেই সময়ে
সোমনাথ একটা
আমেরিকা থেকে
চাকরির সুযোগ পেল। একমাসের মধ্যে জয়েন করতে হবে ।বিয়ে মাথায়
উঠলো।দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিল আগে চাকরিটা নিয়ে নিকতারপরে যখন হোক বিয়েটা করে নেবে।এতো
ভালো চাকরি না ছাড়াই ভালো।সোমনাথ একটু দোটানায় ছিল কারন মিনু একা হয়ে যাবে।মৃন্ময়ী
জোর করে রাজি করালো।এতো ভালো অফার কোনওমতেই ছাড়া যাবে না।পাসপোর্ট ভিসা এইসব নিয়ে দুজনেই মেতে রইল।ঠিক হলো সোমনাথ আগে গিয়ে এক বছরের মধ্যে মিনুকে
নিয়ে যাবে।ওর যাওয়ার সব ব্যবস্থা মিনু দিন রাত চেষ্টা করে নিজের যাকিছু গয়নাগাটি
বিক্রি করে টাকার যোগার করলো।হাসিমুখে সোমনাথ কে ফ্লাইটে তুলে দিয়ে
এবার শুধু সোমনাথ ডাকবে সেই অপেক্ষা। প্রথম প্রথম দু একদিন ছাড়া ফোন ।প্রচন্ড মন খারাপ দুজনের।
এক কথা তুমি ভালো থেকো ঠিক থেকো একটা বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে ।ঠিকই ছিল মিনু।এক বছর পেরিয়ে গেল ।ফোন কমতে থাকল ।যোগাযোগ কমতে থাকল বাড়ি বদলানো হলো ঠিকানা এলো না ।ফোন নাম্বার পাল্টে গেলো ।হতাশায় হতাশায় পাগলের মতো
হয়ে গেলো ।তবু কোন খবর কোনো
ভাবেই যোগার করতে পারলো না।বাড়িতে বাবা মা অস্থির । ওদের বাড়ি থেকে কিছু জানা গেল না ।
ওরা তো অসবর্ণ বিয়ে তে রাজিই ছিল না ।তাই ওর বাবা মা বেশ খুশি ই হলেন।মিনু শেষে একদিন দেখা করে বললো আপনার ছেলে কেমন আছে কোথায় আছে চিন্তা হচ্ছে না ।কিরকম বাবা মা আপনারা।আমি পরের মেয়ে চিন্তাতে পাগল হয়ে যাচ্ছি ।বিদেশে একা আমার যে খুব দুর্ভাবনা হচ্ছে ।বলতে বলতে কেঁদে
ভরাল।কিন্তু ওর বাবা
মা একদম নির্লিপ্ত।মিনু
মনেমনে ওদের অমানুষ বলে ফিরে এলো।বাবা মা আত্মীয়েরা বললেন ওকে ভুলে যা।নতুন করে জীবন শুরু কর।যে ইচ্ছে করে হারিয়ে গেছে তাকে কি তুই আর খুঁজে পাবি মা? কারোর কথা মানতে চাইলো না মন।সোমনাথ কখনও এটা করতে পারে না। আমি যে ওর ভেতর পর্যন্ত চিনি।এতো ভালোবাসা মিথ্যে হতে পারে না ।ঠিক একদিন খুঁজে পাবে ওকে।সব ছেড়ে ছুড়ে এই
খানে চাকরি নিয়ে চলে এলো।সংগে থাকলো তার নিশ্চিন্তের
বিশ্বাস ।সারা পৃথিবী যদি বলে এ ভালোবাসা মিছে ও একা প্রতিবাদ করে বলবে না এ হতে পারে না।আমি যে ওকে হৃদয় দিয়ে চিনি।ওর ভালোবাসা আমার প্রাণের গভীরে আছে ।ওর মুখ ওর চোখ ওর কথা কখনও মিথ্যে হতে পারে না।অজ্ঞাত
বাস করবে বলে কাউকে না জানিয়ে এখানে আসা।ঠিক একদিন সোম ফিরে আসবে।
আজ
ভগবান তাকে কী
দেখালেন ।এতদিনের তিল তিল করে গড়া স্বপ্ন এক নিমেষে মিথ্যে হয়ে গেলো প্রভু। ফুলমনি ধরে ধরে নিয়ে চলে।চোখে র জল বাধা মানছে না।সব কিছু আবছা মনে হচ্ছে ।হঠাত ফুলমনি চাপা স্বরে বলে দিদিমণি মরদ গুলানের বিবেচনা
নাই।উয়ারা নিজেকে ছাড়া কিছু বুঝে না ।তুই কান্দিস না কান্দলে তো তোর নিজের অপমান ।তুই তো দোষ করিস নাই।লাজ
তো উয়ার তুই তো খাঁটি সোনা দিদি।মৃন্ময়ী জড়িয়ে ধরে
ফুলমনিকে পরম বন্ধু র মতো। পরম আত্মীয়ের মতো।
ভোর
হয়ে আসে।চৈত্র
হাওয়া সব বেদনা উড়িয়ে নিয়ে যায় নীল দিগন্তে ।মৃন্ময়ী একটা ঠগ মানুষ কে ভালো বেসেছিল।ঘর তো
করে নি।এখানেই সে
জিতে গেল ।ফুলমনিরা মাটির সাথে জীবন
গড়ে মাটির সাথে জীবন কাটায়। ওদের দর্শন হৃদয় থেকে নেওয়া ।মৃন্ময়ী কি তা বুঝতে পারলো আজ।সত্যিই পুরুষ
মানুষকে বিশ্বাস করা খুব ভুল ।মিনু এতোবড় ভুল করবে এটা সে এখনও মেনে নিতে পারছে না
।সেই সোমনাথ যে মিনু ছাড়া অচল ছিল।সেই সোমনাথ যার এতটুকু সুখের জন্য মিনু নিজের ডক্টরেট করা ছেড়ে দিয়ে একটা
ছোট স্কুলে চাকরি নিয়েছিল।সোমনাথ বড় হবে প্রতিষ্ঠা পাবে এই ছিল তার ধ্যান জ্ঞান।তার শেষ কপর্দক টুকু দিয়ে ওর বিদেশ যাত্রার পাথেয় যোগার
করেছিল।সোমনাথ নিশ্চিন্ত ছিল মিনু আছে ঠিক সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে । তাহলে ও কি কোনও
দিন ভালোবাসেনি।মিনু সব ভুল ভেবে এসেছে ?যাকে ভালোবেসে নিজের
কথা কোনদিন ভাবে নি আজ কি দেখলো সে?
দিন
কেটে যায়।ভালোবাসার এই অমর্যাদা মৃন্ময়ী কে একদম হতাশ করে।ভাবতে থাকে পুরনো কথা গুলো ।সোমনাথ
কী ভালোবাসতো।চাইতো সারাক্ষণ ওর পাশে
বসে থাকতে।হাতে হাত ধরে মুখের দিকে তাকিয়ে কেবলই বলতো মিনু তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।সারাপৃথিবী যদি বলে
তোকে ছেড়ে দিতে আমি শুনবো না।বাবা মা তো তুচ্ছ । এই যুগে বসে ব্রাহ্মণত্বের
গোঁড়ামি আমি মানবো না।মিনু ভয় পেতো।যদি ওঁরা
মেনে না নেন কি হবে ।সোমনাথ নিজেই উদ্যোগ নিয়ে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করবে বলে সমস্ত ব্যবস্থা করেছিল।দু চোখে স্বপ্ন
দেখেছিল ছোট্ট একটা বাড়ি।শুধু ওরা দুজনে থাকবে।বাবা মা সব প্রিয়জনকে দরকার হলে ভুলে
যাবে।কিন্তু মিনু ছাড়া তার জীবন থাকবে না।তখন তো একবারও মনে হয়নি এগুলো ওর মুখের কথা ।কেমন যেন একটা ঘেন্না হলো নিজের ওপর ।এই লোকটার জন্য জীবনের দশটা বছর সে অপেক্ষা করে বসে থেকেছে।নির্লজ্জের মতো সুন্দরী বউ নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে।একটা
খবর দেওয়ার মতো সাহস যার নেই।ইস এই কাপুরুষ টির জন্য সে চোখের জল ফেলছে?
নতুন আলো ফুটে উঠেছে ।ভোরের শান্ত হাওয়া এসে মৃন্ময়ীর চোখে
মুখে স্নিগ্ধ পরশ
মাখিয়ে দেয়।অদূরে হেল্থ সেন্টার টি দেখতে পায়।চোখ বুজে প্রার্থনা করে এই অভাবী দুখী মানুষ গুলিকে যেন প্রাণ দিয়ে সেবা করতে পারে ।এভাবেই কাটিয়ে দিতে হবে
সারাজীবন।
এরপর
অনেক গুলো বছর পার হয়ে
গেছে ।ম্যাডাম মৃন্ময়ী,
সিস্টার মৃন্ময়ী , দিদিমণি মৃন্ময়ী পূজিত
হয়ে চলেছেন এই অনুন্নত অখ্যাত গ্রামের প্রতিটি মানুষের
কাছে ।এখন কোনও সোমনাথ তাঁকে বিচলিত
করে না। মানুষের
কল্যাণের ব্রত যার হৃদয় জুড়ে সেই বিশালত্বের কাছে হাজার বার
মাথা ঠুকলেও কোনও সোমনাথ তাঁর কাছে পৌঁছতে
পারবে না ।স্পর্শ করা তো দূরের কথা ।সূর্য ওঠে কালের নিয়মে দিন কেটে যায়।শালপিয়ালের বনে
পাতা ঝরে। আবার নতুন
পাতা র সবুজিমায় ভরে ওঠে চারিদিক ।মৃন্ময়ী
এই গ্রাম টিকে নিজের মতো করে ভালোবেসে ফেলেছে।কোলকাতার জীবন
তার কাছে চিরকালের জন্য মুছে গেল ।মাঝে মাঝে বাবা মা আসেন ।ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান ।অনুনয়করেন।মিনুর
এক কথা যা ফেলে এসেছি ফেলেই এসেছি।আর ঐ কোলাহলে ফিরবে
না।সে একটা সুন্দর শান্তির জায়গায় ঠাঁই পেয়েছে ।আর নয়।শহুরে সভ্যতা তার সব কেড়ে নিয়েছে ।সোমনাথের উপর
ধিক্কার ঘৃণা তার
হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করে চলে দিনরাত ।বেশ আছে সে।সরল সাদাসিধে এই অনুন্নত মানুষ গুলো তাকে এতো ভালোবাসা
দিয়েছে।ওর সারা জীবন কেটে যাবে এইখানে
এদের সঙ্গে।ফাগুন মাসের কৃষ্ণ চূড়া গাছে থোকা থোকা লাল
ফুল ফুটে রয়েছে ।নির্মল সুনীল আকাশ দেখতে
দেখতে মিনু এই প্রকৃতির মাঝে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়।