চারদিকে
পুজোর গন্ধ। ধুপ-ধুনো-অগরু-ফুল-তুলসী-বেলপাতা, কি ভালো যে লাগে অন্তু-র
! তার সঙ্গে মা, মাসি, দিদি এদের গায়ের মিষ্টি সেন্টের গন্ধ, সাজগোজ, যেন স্বর্গ নেমে আসে
পৃথিবীতে ! পুজোর ছুটিও বেশ লম্বা, সবমিলিয়ে আনন্দের সীমা থাকে না ! ওরা পুজোয় কোথাও বেড়াতে যায় না। মা বলে, কি বোকা লোকগুলো, পুজোয় বেড়াতে যায় ! তখন
তো কলকাতায়-ই মজা বেশি ! পুজো, থিম পুজো ! আর বানায়-ও বটে ! কত রকম যে বুদ্ধি,আইডিয়া, দেখে
দেখে তাকে লেগে যায় !
আজ-ও তেমনি। এই মন্ডপের থিম 'প্রাচীন গুহা মন্দির'......প্রাচীনকালে গুহামন্দির হতো কিনা জানে না অন্তু,ততটা ইতিহাস তার পড়া হয়নি এখন-ও।
কিন্তু দেখতে খুব-ই ভালো লাগে তার। ঢুকলো যেন একটা সত্যি গুহার
ভেতর ! ঢোকার
মুখটায় একটা সিংহ মুখব্যাদান হাঁ করে আছে, ঢুকতে কেমন গা ছম ছম করছিলো অন্তুর !একটু বড় মত একটা ছেলে আগে আগে
ঢুকতে ঢুকতে বলে গ্যালো--'কি রে ভয় করছে ?' সঙ্গে হাসিটা গায়ে জ্বালা ধরানো ! অমনি ভয় গায়েব! গুহায় ঢুকে দেখে কেমন
অন্ধকার মত, তাই
তো হবে, গুহার
ভেতরে তো সূর্যের আলো ঢোকে না ! দ্যাখে কি গোটা গুহায় কত ঘন্টা ! পরিক্রমার
রাস্তার পাশে পাশে রেলিঙের উপরে, দেওয়ালে, সামনে-পিছনে,কোথায় নয় ? চোখ ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে উপরদিকে চোখ যায় অন্তুর, সেখানেও অজস্র ঘন্টা
ঝোলানো। সেগুলো আবার বেশ বড় সাইজের ! কেন যেন আবার গা-টা শিউরে ওঠে ! মাকে তাড়া
লাগায়। মা রিনা আন্টির সঙ্গে গল্পে মত্ত, বাবা মত্ত ছবি তোলায়। কি
আর করে অন্তু,বড়রা তো কক্ষনো কথা শোনে না ! হতাশ হয়ে অন্য
বাচ্চাদের দিকে মন দেয় সে । বেশ লাগে !
হঠাৎ, তীব্র একটা চিৎকার ! কি হল কিহল, একটা হৈ চৈ, গোলমাল বেঁধে যায়, কেউ হুড়োহুড়ি করে
ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা। কেউ ভীড় করে, ঠ্যালাঠেলি করে মজা
দেখতে, মহা
গন্ডগোল ! অন্তু মাটিতে পড়ে আছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
কেন ? কারণ উপরথেকে একটা বড়
ঘন্টা ছিঁড়ে পড়েছে, ঠিক অন্তুর মাথায় ! সঙ্গে সঙ্গে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান,চারদিকে রক্তের বন্যা।
মা-বাবা অস্থির, দিশা-হারা।
একজন ডাক্তার ছিল, এতক্ষনে ভীড় ঠেলে অন্তুর কাছে পৌঁছতে পারে। ছোট্ট হাতটা তুলে নিয়ে, হতাশ মাথা নেড়ে উঠে পড়ে। করুন আর্তনাদে ছেলেকে
জড়িয়ে ধরে লুটিয়ে পড়ে অন্তুর মা। বাইরে মাইকে বেজে ওঠে...'রূপং দেহি, জয়ং দেহি, যশো দেহি, দ্বিষোজহি'........