অনেক
রাতে ঘরে ফিরেছে রহিম বাদশা। সুজা সম্রাট তখন ঘুমে। ঘর মানে নামেই ঘর। কারো জমিতে
অনেকগুলো রুম করে ভাড়া দেওয়া কমন রান্না ঘরআর
বাথ্রুমের একটি নিয়ে থাকে ওরা। সপ্তাহের
ছয়দিন বাসের হাতুয়া হয়ে কাজকরে দুজনে। কামাই রোজগার খারাপ না। ফজরের আজান পড়লেই
বেরিয়ে যায়। ওস্তাদের নির্দেশ দেরি করা চলবে না। দেরি ওরা করেও না। সান্টুর দোকানে
চা বিস্কুট খেয়ে ন্যাকড়া দিয়ে বাস ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ফেলে সাঁই সাঁই করে। তখন
ওদের পরনে থাকে ছেঁড়া গেঞ্জি দুমড়ানো হাফপ্যান্ট। এরপর বাস ডিপোর কলে গোসল করে নাস্তা খেয়ে জিন্সের প্যান্ট আর
ব্রুসলির ছবি দেওয়া গেঞ্জি পরলেই পালটে যায় দুজন।
মোহাম্মাদপুরের
চার রাস্তার মোড়ে বাসের দরোজায় চাপড় মারতে মারতে দুই ভাই দুই বাস থেকে চীৎকার করে
এই যে এইযে শংকর ছুঁয়ে জিগাতলা, সিটি কলেজ নিউমার্কেট আজিমপুর হয়ে ---দশ মিনিটের
ব্যবধানে বাস ছাড়ে দুজনের। সুজা সম্রাটের বাস ছাড়ে ছয়টা কুড়িতে। রহিম বাদশার বাস ছেড়ে যায় ছয়টা তিরিশে ।এর মধ্যে বাস
ভরে উপচে পড়ে অফিস যাত্রী, বিভিন্ন ইশকুল কলেজের ছাত্র শিক্ষক। তারপরেও ওরা
চেঁচায়, ফাঁকা আছে ফাঁকাআছে ঢুকে যান ভাই ঢুকে যান । মাঝে মাঝে নাক উঁচু কেউ ভিড় বাসে উঠে বিরক্ত হয়ে
বলে এই ছোঁড়া জায়গা কই ? খালিখালি ডাকলা মিয়া—সুজা দেবদূতের মত হেসে বলে, ভাইয়ারা
আপুরা কষ্ট করে একটু ফাঁকা করেন উনি ঢুকবেন ! কান গাল লাল করে চেপে যায় কেউ কেউ।
অই ভোরে অতি রসিক কেউ আবার আদিরসাত্বক ফোঁড়ন
কাটে, ফাটি গেলি কি অরবানে মামু। অন্যেরা বাড়তে দেয়না,সময়ের মূল্য কোটি
টাকার। তারা সমস্বরে বলে উঠে, হইছে হইছে
এইবার ছাড়ো দিকিন । জ্যাম বাঁধলি দেরি হয়ি
যাবিনে কলাম।
সান্টুর
দোকানে বসে ওস্তাদ তখনও সিগ্রেট খায়। ছটা কুড়ি বাজার আধা মিনিট আগে সুজা ইশারা করলেই ওস্তাদ এসে ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়। ওদিকে
রহিম বাদশা যাত্রী তুলতে ব্যস্ত। একই
কায়দায় বাস ভরে ফেললে অই বাসের ওস্তাদও এসে স্টার্ট দেয়। তারপর শুরু হয় দুই বাসের
প্রতিযোগিতা । সুজায় জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ রহিমে ছুটে যায়। ওস্তাদ সুজাকে বলে,
দ্যাখছস কান্ড, অই গাল দে গাল দে, শালা রহিমের
বাচ্চা আমাগের যাত্রী ভাগায়ে নিতিছে। সুজা
রগ ফুলিয়ে গালি দেয় অই বেটা মাঙ্গির পুত অন্যের যাত্রী তুলতিছিস যে বড়। টায়ার ফাডাইয়া হাওয়া
কইরা দিমু কলাম। রহিম ব্রুসলির মত ঘুঁষি দেখায়, অই শালা সুজার বাচ্চা যাত্রী
কি তোর বাপ লাগে ! মনডা পোড়ে ক্যান এত?
সুজাও গলা চড়ায়, না তোর বাপ লাগে। দেহস না তোর বাসে কেমন ফাল দিয়া ওডতাছে। মাঝে
মাঝে ত এমন হয় গালাগালি পোঁছে যায় দুজনের মায়ের গোপনাঙ্গ পর্যন্ত। রহিম ঘুষি
দেখিয়ে বলে, শালা বজ্জাতের বাচ্চা বজ্জাত আমাগের যাত্রী ভাগায়ে নিস, তর মায়ের ইয়ে মারি শালা।ওদিকে সুজাও চেঁচায় , তোর মা্রে
ইয়ে করি শালা খচ্চর ! অই যাত্রী আমাগোরআছিল
চোখি দেখিস নাই!
কাজ
শেষে দুজন দু টাইমে ঘরে ফিরে আসে। সান্টুর হোটেলেই খায় তিনবেলা। মুখোমুখি দেখা হয়
খুব কম। প্রায় দিন সুজা আগে ফেরে। রহিম এসে দেখে সুজা ঘুমাচ্ছে। বিছানায়ছড়ানো
বইখাতা । সারাদিন খেটে কতটুকু পড়তে পারল
কে জানে। ভাইটার ব্রেন আছে যথেষ্ট। উন্মুক্ত থেকে এ প্লাস পেয়ে পাশ করেছে এসএসসি।
কলেজের স্যাররা বলে সুজা এইচি এস সিতেএ প্লাস পাবেইপাবে। রহিম তুমি এবার ডিগ্রীটা
শেষ করে ফেলো। চাকরি একটা হয়ে যাবে তোমার । রহিমের ইচ্ছা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে
কোন চাকরী নেওয়ার। কেমন স্যার স্যার বলে সবাই। দেখে ভাল লাগে ওর।
ছড়িয়ে
ছেটানো বই খাতা সরাতে গিয়ে সুজাকে দেখে রহিম। কি সুন্দর মুখভাইটার। ওদের মা পরমা
সুন্দরী ছিল। সুজা মার মত সুন্দর হয়েছে দেখতে । সেহাট্টাগোট্টা বাবার মত কালো । গ্রামের
অনেকেই ওদের বাপকে বলত, হারুণ মোল্লা তুমি
ভাই মসজিদের ইমাম হই্লা যে কোন দুঃখে! এরচিপুলিশহলিভাল করতা মিয়া।কত কিছু যে উপরি পাইতা টাকা পয়সা জামা জুতো ফলমূল মাগ
মেয়েছেলে !
এগুলো
শুনলেই মসজিদের ইমামহারুণ মোল্লা হাতের গুলি লুকিয়ে আরো নরম সরম হয়ে বিড়ালের মত
গুটিয়ে যেত। তার ভারী লজ্জা । কিন্তু এরকম কঠিন শরীরে এত নরম মন কি করে
যে আল্লাহপাক দিলো তা কিছুতেই বুঝতে চাইত না হারুণ ইমামের বউ শাবানা। সে
কেয়াফুলের মত আঙ্গুল ছড়িয়ে বলত, ইমামের বেটা ইমাম আমার ছেলেদের যদি ইমাম বানাইছ ত
তোমার হাড্ডি আমি ভাঙ্গি ফেলাবানি। আমার রহিম বাদশা মাস্টার হবেক। আর সুজা হবেক
মেজিস্টাট। আম্মাকে প্রচন্ড ভয় খেত আব্বা। রহিম সুজাও ছিল মায়ের ন্যাওটা। আম্মুর ভয়ে
আব্বা বেশি সময়ই মসজিদে বসে থাকত। এটা আবারআম্মা জানতআর খুব মজা পেত । মাঝে মাঝে
নিজেই মাথায় ঘোমটা দিয়ে আব্বাকে ডাকতে মসজিদে চলে যেত। আব্বার সেকি নাজেহাল
অবস্থা।
বাল্য
বিবাহ বন্ধের মিটিং এ ঢাকা গেছিল হারুন মোল্লা। এদিন পদ্মায় কোন ঢেউ ছিল না।
লক্ষ্মী নদীর মত ঝিরঝির বয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মাওয়া ঘাট আর সামান্য দূরে এই সময় এক
ট্রলারের ধাক্কায় কাত হয়ে ডুবে যায় হারুন মোল্লাদের ছোটলঞ্চ।
অনেকেই সাঁতরে উঠতে পেরেছিল। আবারপদ্মার স্রোতে ভেসে গেছিল কেউ কেউ। পদ্মাপাড়ের
গ্রামের ইমাম হারুণ মোল্লা ছিল সেই ভাসন্ত মানুষের সাথে।একদিন একরাত পরে হারুণ
মোল্লার লাশ পাওয়া যায় পদ্মার চরে
কাশফুলের জঙ্গলে। কাক শকুনে খুবলানো, ফোলা
ঢোল হয়ে গেছে লাশ। দেখে শাবানা আর সুজার
সেকি বুকফাটা কান্না। নীল পলিথিনে মুড়ে মন্ত্রির দেওয়া টাকায় শ্যালো নৌকায় লাশ নিয়ে ওরা নিজেদের গ্রামে
ফিরে এসেছিল । পদ্মা তখন কি শান্ত করুণ । রহিম বাদশা লুকিয়ে একটি হাতে পদ্মার জল
ছুঁয়ে মনে মনে ভেবেছিল জলের অপর নাম জীবন।
তবে কেন আব্বাকে মেরে ফেলল এই জীবনদাত্রী পদ্মার জননীধারা ?
রহিম
বাদশাদের গ্রামের অবস্থাও খুব খারাপ। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে পদ্মাঅর্ধেক গ্রাম খেয়ে
ফেলেছে। প্রতিদিন কারো না কারো ভিটেমাটি তলিয়ে যাচ্ছে ভাঙ্গনের বেগে। হারুন মোল্লার দাফন শেষে বারান্দায় চাটাই পেতে
বড় চাচা চাচি বলেছিল আর মাস খানেক হয়ত
টিকবে এই গ্রাম।পদ্মার গর্ভে চলে যাবে রহিম সুজার পৈত্রিক বাড়ি । শোক পালনের সময়
নেই। মনের ভেতর ভাল করে শোক গেঁথে যেতে না
যেতে রহিম দেখে গ্রামের সবাই ঘরবাড়ি ভেঙ্গে, বড় বড় গাছ বিক্রি করে চলে যাচ্ছে।বড় চাচারা ঠিক করেছে
আপাতত বড়চাচির বাপের বাড়ি
চলে যাবে। সেখানে বাটার দোকানে কাজ
পেয়েছে বড়চাচা। তোরা কি করবি ও শাবানা ? শোকতাপেশাবানার তখন মাথায় বাড়ি। তার বাপের
কোন বাড়ি নাই। আপন ভাই বেরাদার আত্মীয় স্বজন বলতে কেউ নাই। তারা ত ছিল উদবাস্তু।শরনার্থী।
দেশভাগের সময় চলে এসেছিল এদেশে। ধুনুরির কাজ নিয়ে গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছে
আব্বাজান। একটুকরো মাটি কিনে ঘর তোলার আগেই মরে গেছে আব্বা। মা মরেছে প্রতিবেশী বড়ে চাচার ঘরে
আশ্রিত থেকে। শাবানা বড় জায়ের আঁচল ধরে, আপাজান আপনাদের সাথেগেলে কি কোন কাজ পেতে পারব না ?বড়চাচির মায়ার শরীর । অঢেল স্নেহ নিয়ে তিনি বলেন, পাতি
পারিস। তয়রাজবাড়ি ছোড শহর। চল গিয়ি দেখ ক্যানে কি কাজ পাস ।
আবার
শ্যালো নৌকায় পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওরা রাজবাড়ি চলে আসে। বড় চাচির এক দূর্মূখ আত্মীয়ের
পতিত ভাঙ্গাচোরা বাড়িতে থাকতে শুরু করে ওরা। তিনি আবারযখনতখন এসে দেখে যান তার ভাঙ্গাবাড়ির
সবকিছু ঠিক আছে কিনা। মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে বড় চাচাকে, মিয়ার বেটা কিছু টিছু আবার
বেচি খাচ্ছ নাতো! নদীভাঙ্গা মানুষ জনরে বিশ্বাস কি কও দিহি! যেন নদী ভাঙ্গা
মানুষজন চোর ছ্যাচ্চোর অভিশাপী প্রাণী। চাচাতো বোন লায়লা, রহিম,
সুজাকে ইশকুলে ভর্তি করে দেয় বড় চাচা।
পড়াশুনায় তিনজনেই ভাল। তিনজনকেই ডেকে বড় চাচা বলেন, অন্যের জায়গা জমিতে বসত করতি
ঘিন্না লাগে বাপজান । তোমরা কিন্তু পড়াশুনা শেষ করি চাকরি পালি পয়লা জায়গা জমি কিনবা। জীবনরে হেলাফেলা
অরবা না কেউ মনে রাখবা কথাডা।আম্মা
চাচিআম্মা কাজ পায় সরকারী অফিসারদের কোয়ার্টারে ।
অই
সময় আম্মা কেমন বদলে যেতে থাকে। আগের মত গল্প করেনা। হাসে না। খায় না। রাতে ঘরের
বাইরে উঠোনে বসে থাকে। কি যে ভাবে সারাক্ষন। বড় চাচিম্মা কি হয়েছে জানতে চাইলে চোখ মুখ তরতাজা করে বলে, কিছু না
আপাজান।রহিম সুজার আব্বার জন্যে এয়্যসা দিল পোড়ে! বড় চাচীম্মা প্রচুর স্নেহ নিয়ে কাচে ডাকে । মাথায় হাত
বুলিয়ে আদর করে বলে, যা ঘুমিয়ে পড়।
সেই
দিনটা খুব মনে আছে রহিমের। এসএসসির রেজাল্ট নিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘরে ফিরছিল রেল
লাইন ধরে। এ প্লাস হয়নি। কিন্তু রেজাল্ট খারাপ না। হঠাত মনে হল ট্রেনের জানালায়
যেন আম্মাকে দেখা গেল। মাথায় ঘোমটা। ধ্বক
ধ্বক করে চলে গেল ট্রেন। রহিম হাসে। আম্মা
কি করে হবে! আম্মা তএখন বাসায় । নিশ্চয় তার রেজাল্টের অপেক্ষা করছে। বড় চাচা চাচি
রোজা রেখেছে গেল তিন দিন ধরে। লায়লাআপু
রেগে মেগেঅনবরত বলে যাচ্ছে, আব্বা রাহি আমার চে ভাল রেজাল্ট করবিনে চিন্তা কইরেন না ত। আপনারা দেখি বাড়িটারে
কারবালা প্রান্তর বানায়ে ফেলতিছেন হায়
রহিম হায় রহিম করে করে। মেয়ের কথায় বড়চাচিম্মা আন্তরিক ব্যাথা পেয়ে একা একাই বলে
বাড়ির বড় ছেলে তার কল্যাণের জন্যে ভাবব না এটা কি বলিস লায়লা ! অই ত আমাদের নিশান।
রহিমের রেজাল্টে সবাইখুশি। কিন্তু আম্মা কই ?
কোথাও আম্মাকে খুঁজে পাওয়া যায়না।রহিম ছুটে আসে স্টেশনে। স্টেশন মাষ্টার বুড়ো রফিকউল্লা জানায়, না সে দেখে নাই শাবানাকে।তবে কৃষি অফিসের পিওন লিয়াকত আজ বদলি হয়ে চলে গেছে সেই পার্বতিপুরের কোথায় না কোথায়।তার কাছে দোয়া চেয়ে গেছে আর বলেছে রহিম সুজা যেন তারে মাফ করে দেয়।বড়চাচাকে জানাতেই তিনি সবাইকে চুপ থাকতে বলেন। রহিমসুজাকে কাছে ডেকে মাথায় হাত রেখে বলেন,
বেটারা মাফ করে দিস তোরআম্মাকে।জীবনের ভার অনেক কঠিন ভার। একা একা সবাই জীবনরে বইতে পারেনা। বড়চাচিম্মাকেঁ দে ভাসান,
শাবানা একবার বললি আমি নিজে দাঁড়ায়ে ওর বিয়ে দিতাম। আপন বোনের মত ভালবাসতাম ওকে।লায়লা আপু ধমক দেয়,
আম্মা চুপ কর। রহিমবাদশা আর সুজাসম্রাট একেবারে ছোট নয়।ওরা সব বুঝে চুপ করে যায়। ছোট্ট বাড়িটার তিনটে ঘরে, উঠোনে, হেলেঞ্চা ভরা ডোবাপুকুরে শাবানার কোন চিহ্ন আর থাকেনা। পাড়া প্রতিবেশিরাও ভুলেযায়।কেউকেউ বাড়ির গেটে এসে রহিম বাসুজাকে ডেকে বলেতো মার আব্বাকে একটু ডাকিদাও তো বাবা।রাস্তাঘাটে পাড়ায় দেখা হলে কেউ কেউ বলে কুতুবউদ্দিন মোল্লার বড় ছেলেটা খুব ভাল।
ও কুতুবউদ্দিন ছোট ছেলে নাকি বৃত্তি পাইছে? ভাল ভাল।
বড়
চাচা চাচিও কখনো উনিশ বিশ করেনা। রহিম প্রাইভেট পড়ায়। ছোট শহরে কোন রকমে কেটে যায়
ওদের জীবন। কিন্তু বড়চাচা হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিয়মিত না যেতে পারায় চাকরী চলে
যায় । সামনে লায়লা আপুর পরীক্ষা । দিন আর চলে না। সেই সময় রহিম চাচাকে বলে ,বড়
আব্বা ঢাকায় যাই। কিছু না কিছু কাজ পেয়েই যাবো। কুতুবউদ্দিনের চুপসে যাওয়া গাল,
পেট । শুধু চোখদুটো জ্বলে,তোর পড়াশুনা বাপ? উন্মুক্তে ভর্তি হয়ে যাবানি বড় আব্বা।
সপ্তাহে মাত্র একদিন ক্লাশ করতি হবি।চিন্তা কইরেন না আমি পারবানি। বড়চাচিম্মা থালায় ভাত তুলে দিতে দিতে বলে,পারতি তোমারে
হবিনে যে। সংসারের হালবড় ছেলেরেই ধরতি হয়। তোমার উপর আমাদের আশা ভরসা বাবা রহিম।
সেই
থেকে রহিম ঢাকায় । সুজাকেও নিয়ে এসেছে।
লায়লা আপু ইডেনে পড়ে। হোস্টেলেই থাকে। মাস্টার্স শেষ হলেই সরকারী চাকরীর পরীক্ষা
দেবে। দুই ভাই বাসের হাতুয়াগিরি করে সোয়া
কাঠা জায়গা কিনে দিয়েছে বড়চাচাকে। মাটির ঘর, টিনের বেড়া, টালির চাল কুতুবউদ্দিন
ঘুরে ঘুরে গাছ লাগায়। নিজের জায়গা ভরে গেছে
গাছে। এখন অন্যের জায়গায়, রাস্তার পাশে গাছ লাগিয়ে গাছবুড়ো নাম কিনেছে। বড়চাচিম্মাকে
কাজ করতে দেয়না দুভাই। ঈদের ছুটিতে ছেলেমেয়েরা ঘরে এলে জীর্ণ শীর্ণ শরীরে খুশী
ছড়াতে ছড়াতে বাজারে যায় কুতুবউদ্দিন।
অনর্থক রাস্তায় দাঁড়িয়ে যার তার সাথে গল্প করে । সে গল্পের শুরু হয় রহিম, সুজাকে
নিয়ে আর শেষ হয় “এখন লায়লার বিয়ে দেব নারে ভাই” এই কথা দিয়ে। রহিম সুজা দেখে
বড়চাচা যেন খুশিতে কুঁজো থেকে একটু লম্বা হয়ে হাঁটছে । আর বড়চাচিম্মা এ বাড়ি ওবাড়ি
ছেলেদের আনা এটা সেটা দিয়ে চোরা আনন্দে
খুব হাসছে।
রেল
স্টেশনের কাছে জবরুল ভাইয়ের চায়ের দোকানে বসে রহিম বাদশার কেবল মনে হয় আম্মা যদি
ফিরে আসে। মাথায় ঘোমটা দিয়েএকটা দুটো ভাইবোনও
যদি থাকে, যদি লিয়াকত চাচাকেও নিয়ে আসে
তবু আম্মাকে সে ঘরে নিয়ে আসবে ।আম্মা ত অন্যায় কিছু করেনি। আব্বা যদি আবার বিয়ে করত তাহলে কি
ওরা তাড়িয়ে দিত আব্বাকে? শার্টের হাতায় চোখ মুছে চলন্ত ট্রেনের
জানালার দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে
রহিম বাদশা।কেন যেন মনে হয় আম্মা ঠিক ফিরে আসবে।