সেদিন
বিকালে পম্পি ওদের দোতলার ছাদে বসে ওর বাবার জন্য একটা সোয়েটার বুনছিল । হঠাৎ একটা
নীল রঙের ঘুড়ি গোত্তা খেয়ে এসে পড়লো ওর পায়ের কাছে । দেখে খুব উল্লসিত পম্পি ।
উল-কাঁটা রেখে ঘুড়িটা হাতে নিলো । তারপর তনতন্ন করে ঘুড়িটা দেখতে থাকলো ।
হঠাৎ
পম্পির দু’চোখ জলে ভরে গেলো । ওর মনে পড়ে গেলো
ফেলে আসা কত কথা । একদিন ও অয়নের প্রেমে পড়েছিল । ওকে ওর মনে হয়েছিলো আকাশ-মানুষ ।
আকাশ থেকে প্রেম বর্ষণ করছে ওর জন্য । তাই অয়নকে স্পর্শ করার জন্য ও ঘুড়ি হতে
চেয়েছিল । হয়েছিলো এক সবুজ ঘুড়ি ।
কিন্তু একদিন মনে হল পম্পির,সেই আকাশ কোথায় ? সেখানে অয়নই বা কোথায় ?
ও তো গড়পড়তা প্রেনিক । শেষমেশ জোর করে কেড়ে নিতে চায় প্রেমিকার
সর্বস্ব । তাই পম্পির আর আকাশে ওড়া হল না । বিষে-বিষে নীল হয়ে সত্যের কঠিন মাটিতে
নেমে পড়তে হল ওকে । কিছু পরেই পম্পি ঘুড়িটা ছাদ থেকে নীচে ফেলে দিয়ে একা-একা হাসতে
থাকলো । সেকি হাসি ! থামেই না । পাশের ছাদ থেকে সদ্য ডিভোর্সি মৌলিনা দেখে অবাক হয়ে বলল,
’’আরে,পাগলের মতো হাসিস কেন ? কী হয়েছে তোর ?’’ পম্পি তার উত্তর যেই দিতে যাবে,সেই
আকাশে মেঘ করে এলো । ঠাণ্ডা বাতাস বইতে থাকলো খুব । মনে হল,ঝড় নামবে একটু পরেই । ঠিক তাই । ঝড়ের সাথে অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো
। মৌলিনা কিন্তু ওর উত্তর না শুনেই আগে নীচে নেমে গেছে । কিন্তু পম্পি ছাদ ছাড়ার
কথা ভাবতেই পারলো না । মনের মধ্যে তখন ওর এক অদ্ভুত ধরণের উল্লাস । উল্লসিত পম্পি
বারবার ছাদ থেকে নীচের দিকে বারবার তাকাতে থাকলো । যতক্ষণ না ঘুড়িটা উড়তে উড়তে ওর
দৃষ্টির বাইরে না গেলো,ততক্ষণ আনমনে তাকিয়েই থাকলো ।
তারপর ওর চোখ থেকে ঝরা শুরু হল অবিরল অশ্রু-ধারা ।
পম্পির
মা ছাদে উঠে সবিস্ময়ে দেখল,পম্পি ছাদের নীচে
একদৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে । সে কাঁধে হাত দিতেই পম্পির হুঁশ হল । তখনো ও কেঁদে চলেছে
। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি তাকে ওর একফোঁটা চোখের জল দেখতে দিলো না । মার হাত ধরে
পম্পি এরপর ছাদ থেকে নামার সময় পিছন ফিরে তাকাল একবার । মনে পড়ে গেলো ওর বাবার
সোয়েটারের কথা । তাই আবার ওর হাসি-মুখ দেখা দিলো । মাকে বলল,’’এ ঘর আমার । এ ঘর তোমাদের । এখানেই আমি সবচেয়ে সুখী । আকাশের কথা ভাবি
না আর । নিখাদ মাটির মানুষরাই আমার এখন সবচেয়ে প্রিয় । তাই বাবার সোয়েটারের কথা
ভোলা যায় ? উল-কাঁটা নিতেই হচ্ছে । তাই না,মা ?’’
পম্পির
মা সেভাবে কিছুই বুঝল না । তার পাগলী মেয়ের দিকে শুধু হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো ।