রিংটোন
ক্রিং
ক্রিং ক্রিং ------- টেলিফোনটা ক্রমাগত
বেজেই চলেছে । নির্জন দুপুরের
নিস্তব্ধতাকে খান খান করে
আছড়ে ফেলে সশব্দে বেজে চলেছে
টেলিফোনটা । নাহ- বেজে বেজে একসময়
থেমে গেল ধাতব
যন্ত্রটি। এবারওী
তুলল
না কেউ। কি হল মনের ? পলকে ভাঁজ
সোহমের ভুরুতে । নিজের কিউবিকলের
চেয়ারে বসতে বসতে
অজান্তেই আবার হাত চলে যায় অত্যাধুনিক টাচ স্ক্রিন মোবাইলের মনিটরে । এত দেরী তো করে না মন ---
বলা যায় তার ফোনের
জন্যই মুখিয়ে থাকে মেয়েটা । তবে
কি রাগ হল মনের ? নাকি শরীর টরীর খারাপ হল ?কাল রাতের
পর?নাহ যাই ঘটুক আজ একবার যেতে হবে ওদের বাড়ী। সামনা সামনি বসে
জীবনের সব সত্যি কথাগুলো
বলেই দিতে হবে
মনকে। কতদিন সে এভাবে
লুকিয়ে রাখবে তার গোপন
যন্ত্রণাগুলোকে?
এখন প্রায় দুপুর দুটো ।হাইরাইজ বিল্ডিংএর এগারো তলায়
এই কর্পোরেট অফিস
এখন খুব ব্যস্ত ।
সবার কিউবিকলেই লোক
রয়েছে । কর্মীদের চোখ কম্পিউটারের মনিটরে । কি-বোর্ডে হাত
চলছে দ্রুত।বসেরা মিটিং
রুমে ।একপ্রান্তে জেরক্স চলছে
।সোহমের কিউবিকলের দরজা
ঠেলেও দুজন লোক ঢুকলো।চিনতে পারল সোহম ।
মিঃ
বিহানী আর তার বন্ধু ।"স্যার আমাদের
কোটেশানটা দেখেছেন তো ? মুর্শিদাবাদ
, নদীয়া আর
মালদহের জন্য আমরা
লোয়েস্ট রেট দিয়েছি ।"
" নাহ মিঃ বিহানী দেখা
হয় নি। এই কদিন নর্থ বেঙ্গল ট্যুর নিয়ে
আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম ।তবে
আপনাদের প্রোপজালটা আমার মনে
আছে বসের সঙ্গে
আমি সময়মত কথা বলব।"
"দেখবেন স্যার
ওই অ্যাডওয়েজ যেন কাজটা
না পায়..." দাঁতে দাঁত চেপেন
মিঃ বিহানী । আলগা হাসি ঝোলে
সোহমের মুখে । আজব চীজ বটে ।
প্রফেশানাল জেলাসি । আজকাল এ সব
দেখতে দেখতে তারও প্রায়
গা সওয়া হয়ে গেছে ।নয়
নয় করেও মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে
সেও তো প্রায় বছর দশেক কাটিয়ে
দিল এই ইন্ড্রাস্ট্রিতে ।বার বার
মনের চিন্তাটা মাথায়
আসছে আর থেকে
থেকে মনটা খচ খচ করে
উঠছে সোহমের।
পাশের
কিউবিকলের কৌশিক দরজা নক করছে । আবার সেই এতাল
বেতাল কথা । কোন রকমে হ্যাঁ হুঁ করে
পাশ কাটানোর চেষ্টা করে
সোহম।সে ভালো নেই-- সত্যিই ভালো
নেই। একেই মহুলের সঙ্গে সম্পর্কটার পরিণতি
কি হবে এ নিয়ে সে
যথেষ্ট টেনশানে রয়েছে । তার
উপর আবার মনের
এই খামখেয়ালিপনা -- এই এক ঘেয়ে
অফিস -- অফিস শেষে রোজই ওই
সাতশো চল্লিশ স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটে
আর ফিরতে ইচ্ছে
করে না আজকাল ।
মহুলের সংগে
কথা বন্ধ তাও প্রায় বছর
ঘুরতে চলল। প্রথম প্রথম
তারা তাও একই
ছাদের নীচে ছিল --- দুজনের মধ্যে অলিখিত
চুক্তি ছিল কেউ কারো
প্রাইভেসিতে ইন্টারফেয়ার করবে
না। মাস ছয়েক হল মহুল তার বাবা মার
কাছে উঠে গেছে । অথচ এই মহুলকেই একদিন ভালোবেসে
বিয়ে করেছিল সোহম। ভাবলেও
হাসি পায়। সম্পর্ক গুলোর পরিণতি কত
দ্রুত মোড় নেয় আমাদের
জীবনে । বাস্তবটা গল্পের চেয়েও
নির্মম । ভাবতে ভাবতেই আবার
কানে দিয়েছে মোবাইল।
সোহমের
চলভাষ যন্ত্রটি থেকে ইথার তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে
টেলিফোনের তার বেয়ে অন্যপ্রান্তে ।
এবারে ফোনের ওই প্রান্তে একটা
ভারী গলা শোনা গেল । বোধহয়
কাজের লোক। "কাকে চাই ?"
মন আছে ?" "নাঃ , দিদি তো বাবু আর মার
সংগে ডাক্তারের কাছে গেছে। ফিরতে রাত হবে। " "কেন কি হয়েছে
মনের ? শরীর খারাপ?"" তা তো বলতে পারবো না
।"" ঠিক আছে । মন আসলে বলবেন সোহম
ফোন করেছিল ।"ফোনটা কেটে
দেওয়ার পর সোহমের মনে হয় , আচ্ছা ডাক্তার খানায় গেলে
মোবাইলটা কেন বন্ধ রেখেছে মন ? হঠাৎ করে
আবার কি
যে হলো!বেশ তো চলছিল ঘন্টার পর
ঘন্টা ফোনে প্রেমালাপ, ছুটির দিনে ডেটিং, মিলেনিয়াম পার্ক, ইকো পার্ক, ইডেন গার্ডেন -- কখনও তো মনে
হয় নি যে মেয়েটা অসুস্থ ।কি
যে হল আবা্র ! যদিও খামখেয়ালী স্বভাবের আর
ভীষণ মুডি টাইপের
মেয়ে মন। তবে মনের
এই খামখেয়ালীপনাই সোহমকে আকর্ষণ করে
বেশি। ভাবতে ভাবতেই বসের ফোন ।
"চ্যাটার্জী একবার
এ মাসের টার্গেট নিয়ে
আমাদের বসা দরকার । প্ল্যানিংটা এখন
থেকেই করতে হবে । " কিন্তু স্যার আজ
আমার একটা বিশেষ জায়গায় যাওয়ার ছিল । একটু তাড়াতাড়ি বেরোতাম।" "
কটার সময় ?" "এই পাঁচটা নাগাদ।""ঠিক
আছে । আজ তুমি যাও। কাল কিন্তু অবশ্যই তিনটে নাগাদ বসব আমরা । উইদাউট ফেইল। বাই দা বাই মেলটা একবার চেক কোরো তো... হেড অফিস থেকে দুটো জরুরী মেল আসার কথা।""নিশ্চয়ই
স্যার। এখনই দেখছি ।"স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সোহম ।যা ক তাহলে
আজ মনের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হবে ।
ব্যালকনিতে এসে একটা সিগারেট ধরায় সে।লম্বা করে একটা সুখটান দেয়। এগারোতলায় অফিস সংলগ্ন এই বারান্দাটা তাদের স্ট্রেস রিলিফের জায়গা--
এখান থেকে নীচের
পৃথিবীটাকে কত ছোট্ট লাগে। গাড়ী গুলো যেন দিয়াশলাইয়ের বাক্স । শহরটা পুরো
খেলনা খেলনা ।দূরে তাকিয়ে দেখল সোহম আকাশটা কেমন ধোঁয়াটে আর বিষন্ন হয়ে
আছে। ঠিক তার মন অথবা জীবনের মতোই।
সল্টলেকে ডাক্তার দেখিয়ে গড়িয়ায় ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল চারটে বেজে গেল মনের । বাড়ীতে এসেই
শুনলো সোহম ফোন করেছিল ।কয়েকদিন ধরেই শরীরটা থুড়ি মনটা ভালো নেই তার-- একটা
আলগা কুয়াশার মতো ভালো না লাগা বিষন্নতা জড়িয়ে থাকে সবসময় । সব কাজের মধ্যে থেকেও যেন কোনো
জায়গাতেই নেই। একটা আলগা বিষাদের মধ্যে ডুবে
থাকে সে। অথচ তার জীবন তো এরকম ছিল না ...স্কুল কলেজে মোটামুটি
উচ্ছ্বল, হাসিখুশি, প্রাণবন্ত মেয়ে হিসাবেই পরিচিতি ছিলো তার।অত্যধিক
উচ্চাকাংখা সেইসংগে কেরিয়ার ঠিকমতো করতে
না পারা থেকেই ক্রনিক ডিপ্রেশানের স্বীকার
হয় সে; তার ওপর দু বছর
আগে নীলের সংগে সম্পর্কটার ব্রেক আপ মনকে
প্রায় খাদের ধারে নিয়ে দাঁড় করিয়েছিলো। ডঃ বলের হাতযশ এবং বাপি মায়ের ঐকান্তিক চেষ্টা না থাকলে হয়তো আজ সে বেঁচেই থাকতো না...
ভাবতে থাকে
মন মানুষের জীবন
কতো জটিল আরও জটিল তার মনের গলিখুঁজি সেখানে কোন
গোপন কন্দরে যে কি লুকিয়ে থাকে কে জানে! নিজেকেই কি ঠিকমতো আজ পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারলো সে!
ভাবতে ভাবতেই ঘড়ির কাঁটার দিকে চোখ
চলে যায় মনের । প্রায় পাঁচটা বাজে। নন্দর মা বলছিল সোহম ফোন
করেছিল -একবার কলব্যাক করা উচিত। কি বলতে চায় সোহম ?
"হ্যালো মন
বলছি" ," কি হয়েছে সোনা তোমার
? শরীরটা খারাপ ? ডাক্তারের কাছে
গেছিলে কেন ?"
" শরীরটা ঠিক নেই সোহম । তাই
রুটিন চেক আপ । "
"আচ্ছা মন আমি যদি তোমার
বাড়ী যাই ? খুব অপ্রস্তুত হবে না ?"
পলকে চমকায় মন । "বাড়ী ! কেন ?"
"তোমাকে যে আমার
অনেক কথা বলার আছে
মন..."
"হ্যাঁ আসতেই
পারো। কবে আসবে বল ?" আমতা আমতা
করে মন।
"ধর যদি আজই যাই ?"
"আজই?"
হ্যাঁ ধরো সাতটা নাগাদ ?
অসুবিধা আছে ?"
"নাহ , আজ তো আর কোথাও বেরোনোর
নেই; তবে বাপি বা মাকে
আমি কিন্তু তোমার কথা
বলিনি এখনও..."
"ঠিক আছে ডার্লিং না বললেও হবে... আমি তো শুধু তোমার
সংগে দেখা করতে
যাব। শুধু তোমার সংগে...'
রিসিভার
নামিয়ে রাখার সংগে সংগেই একরাশ চিন্তা ভীড় করে মনের মাথায় । সোহম
কিছু বলতে চায় সেটা কী হতে পারে ?
জরুরী কিছু কী ?
রান্নাঘরে
একমনে কাজ করছিলেন অর্পনা। রাত্রে চিলিচিকেন হবে তারই প্রস্তুতি... বাবা মেয়ে দুজনেই
ভালোবাসে এই আইটেমটা... পেছন থেকে মন এসে
মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরে... পঞ্চান্ন পেরিয়েছেন
অর্পনা ; এখনও কি সুন্দর মা মা গন্ধ... বুক ভরে শ্বাস নেয় মন।কিরে কিছু বলবি ? মেয়ের চোখের ভাষা পড়তে পারেন অর্পনা ...
"আজ একজন স্পেশ্যাল গেস্ট আসবে মা , সামওয়ান ভেরী স্পেশ্যাল।"
"কে রে ? তোদের য়ুনিভার্সিটির কেউ বুঝি ?"
নাহ , এলেই
দেখবে ।" পলকে খুশি চলকায় মনের চোখে
। কিন্তু তোর বাপির তো ফিরতে আজ বেশ দেরী হবে...
"হোক না দেরী, বাপির সংগে না
হয় অন্য একদিন দেখা হবে। আজ তোমার সংগেই পরিচয় হোক না !
মেয়েকে নিয়ে
চিন্তার অন্ত নেই বাবা মায়ের । এক মাত্র মেয়ে তার
ওপর ভীষণ মুডি
আর জেদী ছোটবেলা থেকেই... ইদানীং একটা
ভালো না লাগা মনখারাপের
চাদর সবসময় ঘিরে রাখে মেয়েটাকে । ডঃ বল বলেছেন , " বুঝলেন মিসেস রায় মেয়ে আপনাদের
অসম্ভব ট্যালেন্টেড ওকে সবসময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা
করবেন।" সেই চেষ্টাই তো সবসময় করে চলেছেন তথাগত -অর্পনা । মন যে
তাদের দুজনেরই চোখের মণি।
প্রায় সাড়ে সাতটা
নাগাদ সোহম এল গড়িয়ায়
মনের বাড়ী। মনেদের বাড়ীটা গড়িয়া
স্টেশান রোডের দিকে প্রায়
মেন রাস্তার উপরেই নিজেদেরই বাড়ী। আড়াই কাটার প্লট টার ওপরে
তথাগত -অর্পনা অনেক যত্ন
করে নিজেদের সাধের নীড়টি বানিয়েছিলেন । বাড়িটার নামও খুব অদ্ভুত। "পথে হল দেরী।" ঢোকবার মুখে গ্যারেজ আর
গ্যারেজের উপর দোতালার প্রশস্ত ঝুল
বারান্দাটা সোহমের নজর এড়ালো না। বেল বাজাতেই মন এবং মনের মার আন্তরিক অভ্যর্থনা ছুঁয়ে গেল সোহমকে ।
"মা এই যে সেই ভেরী স্পেশ্যাল
গেস্ট , যার কথা তোমায় বলেছিলাম...সোহম ।"
"এস বাবা ভিতরে এস । "
অর্পনার গলার মিষ্টতায় সোহম ও বিগলিত।
সোহম
ছেলেটিকে বেশ দেখতে । প্রায় ছ
ফুটের ওপর হাইট। রং ফর্সাই বলা চলে । চেহারায় সবমিলিয়ে একটা
ভদ্র মার্জিত গোবেচারা ভাব আছে।এই ছেলেটিই তবে
মনের নতুন পছন্দ । পলকে উদ্বেল
মায়ের মন। নীল ছেলেটিও তো বেশ ভালোই
ছিল... কতবার তাদের বাড়ী এসেছে... কি যে
হল... আজকালকার ছেলে মেয়েদের মতিটাই আসলে স্থির নেই...। সব কিছুতেই এত
দ্রুত ডিসিশান নিয়ে নেয় ।এই হলায় গলায় তো
এই ব্রেক আপ ।প্রেম তো তাদের সময়েও ছিল...।
তথাগত আর তিনি তো সেই কোন
কলেজ লাইফ থেকে প্রেম করছেন
চুটিয়ে... বিবাহিত জীবনও প্রায়
সাতাশ বছর হয়ে গেল... কই এখনও তো পুরোনো হয়ে যান নি কেঊ কারো
কাছে।
ড্রইং রুমের সোফায় গা এলিয়ে বসে সোহম শুধু মনকেই দেখছিল । এই তার মন... শুধু তারই । গজ দাঁতের
জন্য মুখের হাসিটা আরও অ্যাট্রাকটিভ হয়েছে । অর্পনা তোমরা দুজন
গল্প কর বলে চা জল খাবার আনতে উঠে
গেছেন ।চৈত্রের মাঝামাঝি... এখনও ভ্যাপসা
গরম পড়ে নি সেভাবে । তবুও বসার ঘরের ফ্যানটা ঘুরছে বন বন ।
"তারপর কি মনে
করে জরুরী দর্শন ?"
"বাব্বা ! তোমাকে কি দেখতেও
ইচ্ছে করে না আমার ? তার জন্যও কি
কৈফিয়্ত দিতে হবে নাকি ? গতসপ্তাহে নর্থবেঙ্গল ট্যুরে
গিয়ে তো পুরো উইক এন্ডটাই ঘেঁটে
গেল।"
"ও হরি সেজন্য সপ্তাহের শুরুতেই প্রাণ
আনচান ?"
" কি হয়েছে সোনা তোমার ? ডাক্তারখানায়
কেন গিয়েছিলে ?"
"ও ! তেমন কিছু না, রুটিন চেকআপ ... আজ কিন্তু তুমি তোমার কথা বলতে এসেছ ... কি বলবে বল..."
"হ্যাঁ বলবই তো।। চল তোমার ঘরে গিয়ে
বসি..."
মনের ঘরে সর্বত্র একটা আলগা পরিপাটির ছাপ ।চেয়ার ,
টেবিল, বই, খাতা জায়গার জিনিষ জায়গায়। সোহমকে বসিয়ে
মন অ্যাশট্রেটা তার দিকে এগিয়ে দেয় । সিগারেট
ছাড়া যে সোহমের দমবন্ধ লাগে তা
মনের অজানা নয়। ইন ফ্যাক্ট নেভি কাট সিগারেটের স্মেলটা মনেরও খুব ফেভারিট।
সোহম
বলতে শুরু করে, " আচ্ছা মন ধরো
তুমি এমন কারো প্রেমে পড়লে যে
লোকটা বিবাহিত, তুমি
প্রথমে জানতে পারো নি পরে জানতে পারলে। কি করবে তুমি ? সম্পর্কটাকে ডিলিট করে দেবে না কন্টিনিঊ করবে ?"
"এটা কি তোমার নিজের জীবনের গল্প ?" পালটা
প্রশ্ন করে মন ... মুখে
মৃদু মৃদু হাসি ।
ধরো যদি তাই হয় ?"
"একদ্ম ডিলিট করব সম্পর্কটাকে ।
দু নৌকায় পা দিয়ে কখনও কোন সম্পর্ক টেঁকে
না ।"
"কিন্তু ধরো যদি ছেলেটি
তার বিবাহিত জীবনে সুখী না হয় ? ঘোরতর
বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে জীবন
কাটাতে থাকে ?" আমতা আমতা করে সোহম ।
"তবে ত আরও বড়ো বদমায়েশ ছেলেটা এক সংগে দু- দুটো মেয়ের জীবন নষ্ট করছে ।" মৃদু হেসেই জবাব দেয় মন।
পলকে মুখের আলো নিভে
যায় সোহমের ।কিন্তু মন আমার স্ত্রী
মহুলের সংগে আমার
সম্পর্কটা প্রায় ডিভোর্সের মুখে ।
আমি আর পারছি না মন ,
দু দিক সামলাতে ... কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সোহম।
ঘটনার অভিঘাতে মনও যেন
পলকে দিশেহারা। এতটুকু পড়তে পারে
নি সে এতদিনে সোহমের মনটাকে
! এ কি সম্পর্কের মধ্যে
জড়িয়ে যাচ্ছে সে ...আবার নীলের মতো সোহমও কি তাকে মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে দেবে ?
" অত ভেবো না সোনা - " আচমকা মনের হাত
ধরে সোহম । আর মাস
ছয়েকের মধ্যে আমার
আর মহুলের ডিভোর্স টা
হয়ে যাবে । ডিভোর্স হলেই তোমার
মা বাবার সংগে কথা বলবো
আমি ।উদ্ভাসিত মুখে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কবুল করে
সোহম ।তবুও মন সাড়া দিতে পারে
কই ?
কোথায়
যেন তাল কেটে
যায় সন্ধ্যেটার। বাকি সময়টুকু
হ্যাঁ হুঁ করে কোনরকমে
তাল মেলায় সে।
গভীর রাতে নিজের বিছানায়
একলা হলে মন
ভাবে আচ্ছা মহুলকে
সোহম ডিভোর্স করতে চায় কেন
? ওরা না
ভালোবেসে বিয়ে করেছিল ? শুধু তার জন্য ? তাকে পাবে বলে সোহম এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে
? মনে তো হয়
না... নাহ কারণ বোধহয়
আরও গভীরে । কতটুকু চিনেছে সে সোহমকে
? কতটুকু বা
চেনা যায় একটা মানুষকে এ কদিনে ?
শেষপর্যন্ত সম্পর্কটা
থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় মন । এই কদিনে
সোহম না হলেও অন্ততঃ বার পঞ্চাশেক ফোন
করেছে । হয় সে ফোন
ধরেনি অথবা বাড়ি নেই বলে
এড়িয়ে গেছে ।
কষ্ট যে তারও কম কিছু হচ্ছে
তা নয়। নিজেকে এই কদিন
সে ক্রমাগত প্রশ্ন করেছে ।
সোহম তার
জীবনে কতটা অপরিহার্য ? নাহ কারো সংসার ভেঙ্গে সে সুখী হতে
চায় না । মাঝে একদিন ঠিকানা
খুঁজে খুঁজে সে গিয়েছিল মহুলের
সংগে দেখা করতে ওর অফিসে । মেয়েটাকে দেখে
তার খুব দুঃখী মনে হয়েছে । মনে
হয়েছে এখনও সোহম কে খুব
মিস করে মেয়েটা ; শুধু স্বামী হিসাবে নয়
বন্ধু হিসাবেও। নাহ , এতটা নিষ্ঠুর সে হতে
পারবে না ।মহুল তাকে বলেছে সে কিছুতেই
ডিভোর্স দেবে না সোহমকে
দরকার হলে সে
আইনী লড়াইয়ের পথে যাবে।
একমনে
মোবাইলের রিংটোনের
রবীন্দ্রসঙ্গীতটা শুনছিল মন। "যদি আরো কারে ভালোবাসো /যদি
আরো ফিরে নাহি আসো / তবে
তুমি যাহা চাও /তাই যেন পাও /আমি যত দুখ পাই গো..." মোবাইলের স্ক্রীনে
বার বার লেখাটা ফিরে ফিরে আসছিল সোহম কলিং সোহম কলিং...
দুই
এর ঠিক
মাস ছয়েক পরের কথা ।ইদানীং
খুব অন্যমনস্ক থাকত মন । য়্যুনিভার্সি্টি থেকে ফেরার
পথে বাস থেকে পড়ে
গিয়ে মনের একটা গুরুতর
অ্যাক্সিডেন্ট হয় ।মাথায় প্রচন্ড
আঘাত লাগে। নার্সিংহোমে ভর্তি করা
থেকে সমস্ত কিছুতেই একদম
নিজের ছেলের মতোই
মনের বাবা মার পাশে পাশে থেকেছে সোহম । জ্ঞান
ফেরার পর সোহমকে
দেখে চিনতে পারেনি মন।
সোহমের মুখের দিকে
একপলক তাকিয়েই অন্য দিকে মুখ
ঘুরিয়ে নিয়েছিল । ডাক্তার বলেছিলেন
একটা বিরাট আঘাত
পেয়ে মনের অনেক স্মৃতিই
নাকি নষ্ট হয়ে গেছে । সময়ের সংগে
সংগে পুরোনো স্মৃতি ফিরলেও ফিরতে পারে।
বাড়ি ফিরে আসার পরও স্বাভাবিক হয়
নি মন। অন্যান্য সব মনে থাকলেও সোহমের সব
স্মৃতিই তার মন
থেকে বিলকুল উধাও
হয়ে গেছে।
এ দিকে
শেষপর্যন্ত মহুলের থেকেও ডিভোর্স
পায় নি সোহম । মোবাইলের রিংটোনে
রবীন্দ্রসংগীত বেজে উঠলেই
চমকে ওঠে মন। আর যখন
স্ক্রীনে ফুটে ওঠে সোহম কলিং তখন তার দুচোখ ছাপিয়ে জলের
ধারা নামে...