বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে ঈশান। আজ বোর্ড অফ ডাইরেক্টর্সে ঈশানের
অন্তর্ভুক্তি হবে।সবই পাকা শুধু আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম ঘোষণাটাই বাকী। চেয়ারম্যানতো
ইঙ্গিত দিয়েইছিলেন।পাক্কা খেলোয়াড় ও।উন্নতি,শুধু উন্নতি করে একদম টপে পৌঁছুতে হবে,
স্কাই ইজ দ্য লিমিট- এই হোল ওর জীবনের একমাত্র মন্ত্র। শুধু মাঝে মাঝে ভেতর থেকে
বিবেক নামে একটা শয়তান বড্ড জ্বালাচ্ছে।আরে বাবা, কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড একটা
যুদ্ধক্ষেত্র, আর যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করা কোন অপরাধ নয়, সে যেভাবেই
হোক- এই বলে আর একটা ঈশান বিবেক নামে ওই বস্তুটার পথ আগলে দাঁড়ায়।
গুঁরগাওতে
১৫০ একর জমির ওপর লুনাওয়াতদের যে মোটর কারখানার ডিজাইনটা ঈশান করে দিয়েছে, তাতে
লুনাওয়াতরা ভীষণ খুশি।ঈশানের কোম্পানি হেরিটেজ ইন্টারন্যাশনাল মোটা দাঁও মেরেছে।আর
তাতেই ঈশান তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নয়নতারা সান্যালকে টপকে বোর্ড অফ ডাইরেক্টর্সে
ঢুকে পড়ছে।যদিও আপাতদৃষ্টিতে হেরিটেজ ইন্টারন্যাশনালে সবাই ভাবে ঈশান আর নয়নতারা
খুব ভালো বন্ধু, যতই প্রতিযোগিতা থাক না কেন। এই ডিজাইনেও প্রতিভাময়ী নয়নতারার
অবদান আছে।
ঈশান
একটু দেরী করেই অফিসে এসেছে আজ। নিজের চেম্বারে ঢুকতে যেতেই আর্দালি মোহন সিং
সেলাম ঠুকে একটা চিরকুট দিয়ে বলল, “নয়নতারা ম্যাডামনে আপকো দেনে কো বলা, সাহিব”।
অবাক
হয়ে ঈশান জিজ্ঞাসা করল, “ম্যাডাম কাঁহা? অফিস নেহি আয়া ক্যায়া?”
“জী
আয়া থা, চলা গিয়া।শুনা হ্যায়, ম্যাডাম রিজাইন কিয়া হ্যায়”।
“হোয়াট?”-
প্রায় চিৎকার করে উঠতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে,একজিকিউটিভ সুলভ গাম্ভীর্য নিয়ে
চেম্বারের ভেতরে ঢুকে গেল হবু ডাইরেক্টর।
একরাশ
কৌতূহল নিয়ে চিরকুটটা খুলে দেখল, তাতে লেখা-
“ডিয়ার
ঈশান,
কনগ্রেচুলেশন।এর
কোন প্রয়োজন ছিল না।আমার কম্পিউটার থেকে ডিজাইনটা চুরি করে, ইয়েস চুরি করে
চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে একা ক্রেডিট নিলে।বন্ধুর কাছে বলতে পারতে,আমি খুশি হয়ে
স্বেচ্ছায় দিয়ে দিতাম। যাই হোক, আবার বলি,কনগ্রেচুলেশন।ভাল থেকো।আমি চলে যাচ্ছি। -
ইতি, নয়নতারা সান্যাল”।
ঈশান
নিজের চেয়ারে শরীরটা ছেড়ে দিল। বড্ড ঘাম হচ্ছে, এসি মেশিনের প্রবল ঠাণ্ডায়ও।হিল স্টেশন
গুলোতে পাহাড় বেয়ে নেমে আসা কুয়াশা যেমন করে সমতলকে ঢেকে ফেলে, ঠিক তেমনি বিবেক
নামে দানবটা ওর ২০ বাই ১৬-র সুসজ্জিত চেম্বারে ধেয়ে আসছে চারপাশ থেকে, ওকে গ্রাস
করবে বলে। ঈশান আপ্রাণ চেষ্টা করল, অনেক ডাকল সেই ভেতরের ঈশানটাকে, যে ঈশানটা
বিবেকের সাথে লড়াই করত; কেউ এলো না এবার। মনের ভেতর থেকে কোন সাড়া পেল না কারুর।চারপাশে
একরাশ শূন্যতা।টেবিলের ওপর দামী বেলজিয়াম কাঁচে নিজের অজস্র ভাঙ্গা মুখ দেখে শিউরে
উঠে মুখ ঢাকল হবু ডাইরেক্টর ঈশান চ্যাটার্জী।