গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭

সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

ভাবনার দুই স্রোতে 

লখিয়ার হাতের গভীরে গুটিকতক টাকা ঘামে দরদর করে । একটা দুটো নয় , তিনটে পাঁচশো টাকার নোট । সঙ্গে আরও অতিরিক্ত একটা একশ । লখিয়া এতো টাকা আগে কখনো একসঙ্গে দেখেনি । একটা ধর্ষণের বিনিময়ে এতো টাকা ?

মেয়ে ফুলিয়া মায়ের পেছনে হাঁটতে হাঁটতে টের পায় দুই ঊরুর মাঝখানে তীব্র এক যন্ত্রণা । টনটনিয়ে উঠছে হাঁটার দরুন । ঘরে এসে দাওয়ায় বসতেই দেখে পায়ে রক্ত ।
লখিয়া বুক থেকে আঁচল নামিয়ে টাকা কয়টা আঁচলের খুঁটে বেঁধে নিয়ে এসে দাঁড়ায় মেয়ের সামনে - দাঁড়া , নিসুন্দি পাতা ছেঁচে লাগিয়ে দোবোখন । একটুও ব্যথা-বেদনা থাকবে না রে মা ।
ফুলিয়া লজ্জায় মুখ লুকোবার চেষ্টা করতে করতে অস্ফুটস্বরে বলে – “ছবিয়া, সুরতিয়ারা জানতে পারলে কী হবে গো মা ?”
-          কি আর হবে ? বলবি পড়ে গিয়েছিলাম আমগাছ থেকে । একটা কথা মনে রাখবি মা আসল ব্যাপারটা কেউ যেন ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারে । গিন্নীমা বলেছেন পরে আরও টাকা দেবেন । শুধু মুখ টিপে থাকতে হবে আমাদের । পারবি তো রে মা ? দুটো দিন ভালোমন্দ খেতে পাবো এই টাকায় , তাই না বল ?”
ফুলিয়া নিরুত্তর থেকে ভাবনায় ডুবে যায় । এখন যদি পেটে বাচ্চা এসে যায় ! মানুষের বাচ্চা নাকি এভাবেই হয় । ও নিজেও নিশ্চয়ই এভাবেই হয়েছিলো ! ছবিয়া, সুরতিয়ারাও !