গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১১ জুন, ২০১৭

মনোজিৎকুমার দাস


 বাসররাতে হুতুম পেঁচা ডাকে
  
 বিয়ের লগ্নটা সন্ধ্যার দিকে তাই তারা সাজের আখেই বিয়ে বাড়িতে পৌছে সুমনকে সাত দিনের ছুটি নিয়ে আসতে হযেছে মৌলভীবাজার চাবাগান থেকে সিলেটের চা বাগানে বদলীর ফলে সিলেট থেকে বিমানে ঢাকা পৌঁছে বাইরোড়ে বাড়ি আসতে বেগ পেতে হয় নি সুমনা তিন ভাই সুমন ছোট সবাই চাকুরে , গ্রামের বসত তুলে তাদের শহর একটা বাড়ি কিনে রেখে যায় তদের বাবা মারা যাবার আগে সেখান থেকেই কণে বাড়ির যাত্রা গ্রামের মেয়েকে বৌ করে আনাটা সবারই সুমনের দুই বৌদির বাপের বাড়ি গ্রামদেশে রিলেশন করে বিয়ের চল বেড়ে যাওয়ায় সুমনের দাদাবৌদিদের আশংকা ছিল সুমনটা করে না বসে ছেলের উপর মায়ের অগাধ বিশ্বাস ছিল সুমনের মা বলেছিল , "আমার সুমন এমন কিছু করবে না মাদারতলার মেয়েটা তোরা দেখে আয় " সুমনের বড়দা কমল বলেছিল,"আমরা মেয়ে পছন্দ করলেই তো হবে না , সুমনেরও তো একটা মতামত আছে ! কমলের কথা শুনে মা বলেন "আমাদের পছন্দ সুমনের পছন্দ " মায়ের কথা শুনে কমন কী বলবে বুঝে উঠতে পারে না কাছেই ছিল সুমনের মেজ দাদা বিমল সে বললো ,"কণের তো একটা পছন্দ অপছন্দ আছে দিনকাল যা পড়েছে তাতে ছেলে মেয়ে দুয়েরই ..." বিমলের কথা শেষ হবার আগে মা রাগত স্বরে বলে উঠে, "রাখ তোর দিলকাল !" মায়ের কথা মতোই বিয়ের পিড়িতে বসলো সুমন বাসর ঘরে যাবার আগে সুমন বৌ এর মুখ দেথেনি দেখেনি শুধুমাত্র একখানা ফটোতে যা দেখা সুমনের বন্ধুদের মধ্যে রাজা বাসর সম্বন্ধে সুমনকে তালিম দিতে কমতি রাখেনি  

সুমন সুদর্শন সে তুলনায় কণেটি নয় , এমনটাই সুমনের বন্ধুরা বলাবলি করছিল বাসর ঘরে বরবৌ ঢোকার পর বলাবলি করছিল রাজা বললো  "একটু খাটো হলে গড়নটা কিন্তু সুন্দর চোখ দুটো টানাটানা,তাই না মিতা ?" মিতা রাজার বৌ বাসর ঘরের দরজা বন্ধ করে ওরা বের হয়ে আসার আগে মিতা সুমনের কানে ফিসফিস করে কী যেন বলে এলো বিয়ে বাড়িতে নিস্তবদ্ধতা নেমে এসেছে বরযাত্রীরা ফিরে গেছে শুধুমাত্র রাজারা কযেক বন্ধু আছে ওদের কান বাসর ঘরের দিকে কিন্তু ওদিকে কোন সাড়া শব্দ নেই কোন দিক থেকে একটা হতুম পেঁচা ডেকে উঠলো মিতা বাসর ঘরের জানালার দিকে যাচ্ছিল কর্কশ কন্ঠের ডাক শুনে ফিরে এসে রাজার গা ঘেষে দাঁড়ালো ঢাকা শহরের মেয়ে জীবনে গায়ে যায় নি আগে সে রাজাকে বললো ,"আমার ভয় লাগছে " রাজা বৌকে মুখ ঝামটি দিয়ে বলে উঠলো "রাখ তোমার ভয় ! আমি ভাবছি বাসর ঘরের কথা " সকাল হলে রাজারা বাসর ঘরে দরজায় হুড়মুড়ি খেয়ে পড়লো দরজ হাট করে খোলা ব্যাপার কী ! ভোরে উঠে কি হাওয়া খেতে বের হয়েছে ? কে যেন একজন বলে উঠলো রাজা বাসরঘরে ঢুকলো সুমন অঘোর ঘোরে ঘুমাচ্ছে নতুন বৌ কোথায় গেল ! সকাল হলে সব খোলসা হলো নতুন বৌ তার প্রেমিকে সাথে পালিয়ে গেছে মিতা বলে , বাসররাতে পেঁচার ডাক শুনে আমার খটকা লেগেছিল বৌয়ের কথা শুনে রাজা বললো ,"ডাকবি তো হুতুম বাসর রাতে ডাকবি কেন ? ভালবাসার নাগরে সাথে পালাবি তো বাসর রাতে পালাবি কেন ছিনাল ?" মিতা স্বামীর অসংলগ্ন কথাগুলো শুনে বললো ," সর্বনাশ তো ঘটে গেছে ! তুমি তোমার বন্ধুকে ম্যানেজ করো আগে ভাগে নাক ঘুমুচ্ছে বাসররাতে বৌকে আদর সোহাগে বসে রাখতে পারে সে কেমন লোক গো তোমার বন্ধু ! " মিতার কথা শুনে রাজারা ছুটলো আবার বাসরঘরে তখনো সুমন ঘুমে আচ্ছন্ন তাকে জাগিয়ে তোলার পর সে যা বললো তাতে সবাই তো ! নতুন বৌ বরে হাতে এক গ্লাস শরবত তুলে দিয়ে বলে," আমাদের পরিবারের নিয়ম শরবত খায়িয়ে বরে সাথে মিলিত হতে হয় " সুমন বৌয়ের হাতে থেকে শরবত পান করার সময় হতুম পেঁচা ডেকে উঠে এই টুকুই তার মনে আছে সবাই বুঝতে পারে শরবতের মধ্যে কি মেশানো ছিল !