গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭

তাপসকিরণ রায়

ধারাবাহিক 

ভোপাল, হ্যান্টেড কাহিনী--১৪  
 
নবাবী ইমারত

ভোপালের লালমাটি রোড লালমাটি পাহারের গায়ে এখানকার এক বহুদিনের পরিত্যক্ত নবাবী বাংলো বাড়ির ভূতের বদনাম ছিল  

বেশীদিন আগের ঘটনা নয়--ভোপালের শিবপুরীর দীপক রজক নিজের স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ করে তাকে ঘুরিয়ে আনার নাম করে ওই ভূতের বাংলো বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে স্ত্রীকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে তারপর থেকে বদনামী বাংলোয় ভুতুড়ে উৎপাত আরও বেড়ে যায়

বাংলো থেকে নানা রকম অদ্ভুত সব শব্দ ভেসে আসে কখনো কান্নার, কখনও গাড়ির হর্ন বাজার বা ব্রেক কষার মত আচমকা সব শব্দ ! জাগা নিয়ে বহুদিন থেকে লোকজনের চর্চা রয়েছে এটি বিশেষ ভাবে ভৌতিক বাংলো হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে লোকজন এর ধারকাছ দিয়ে যেতে ভয় পায়, এমন কি তারা দিনের বেলাতেও এর আশপাশ দিয়ে যাতায়াত করে না বলতে গেলে জাগাটা বহুদিন ধরেই বিরান পড়ে আছে এই বাংলো কোন না কোন কারণ নিয়ে সব সময় বিবাদগ্রস্ত ছিল কেউ কেউ বলে, এটা দীর্ঘ দিন ধরে খালি পড়ে থাকায় ভূতের দখলে এসে গেছে আর কারণেই এখান থেকে গভীর রাতে ভূত-প্রেতের কথা, হাসি, চীৎকার শোনা যায় ! আবার কিছু কিছু লোক বলে যে এসব বাজে কথা পুরানো ভোপালের বয়স্ক লোকেরা বল, ওসব কিছুই নয়, শুধু গুজব ! 
    
আসলে বাংলো নাকি এক সময় কোন নবাব তৈরি করিয়ে ছিলেন ঘরের নকশা তৈরির কলা-কৌশল সত্যি প্ৰশংসনীয় বলতে হয় প্রায় এক লক্ষ বাইশ হাজার পাঁচ শত স্কয়ার ফিটের ওপরে এই খুব সুন্দর ইমারত তৈরি হয়েছিল এতে ভোপালের প্রথম রক গার্ডেন আর কর্নার উইন্ডো ছিল এসব পরিচিতি সময়ের ব্যবধানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে

ভোপালে এক সময় থেকেছেন মৌলানা আবুল কালামেরে বোন আব্রু আর আরজু আব্রু বেগম তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমান ছিলেন তিনি ওয়েলস লেডি্স ক্লাবের প্রিন্স অফ সেক্রেটারি ছিলেন বেশ রাত্রি করে নিঝুম লালঘাটি হয়ে তাঁর গাড়ি যখন ফিরত তখন গাড়ীর আওয়াজ সেই বাংলোর দেওয়ালে ধাক্কা লেগে পাহাড়ের গায়ে আঘাত খেয়ে খালি মহলে শব্দের প্রতিধ্বনি হয়ে বেজে উঠত হতে পারে গাড়ির সেই আওয়াজ স্থানীয় লোকজনের কাছে ভূতের কারসাজি বলে মনে হয়েছে !  

নবাবী শাসনের পরে এই বাংলো সেই সময়কার কুড়ি হাজারে নগরের শেঠ ছগনলাল কিনে নিয়েছিল এর পরেই ঘটে যায় সেই ঘটনা শিব পুরীর দীপক রজকের ঘটনা সেই সময় তার ভাইয়ের সঙ্গে ভোপালের সুভাষ নগরে থাকছিল তিন বছর আগেই দীপকের পুনমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল স্ত্রীকে সে বেশ কিছুদিন ধরে সন্দেহ করছিল পর পুরুষের সঙ্গে মেলামেশার কথাটা কতটা সত্য ছিল তা অবশ্য জানা যায়নি পাড়া-পড়শি কেউ কখনও ব্যাপারে কিছু উচ্চবাচ্য   করেছে বলে শোনা যায়নি তবু স্ত্রীর প্রতি নাকি তার বেশ সন্দেহ ছিল আর এই সন্দেহের বশবর্তী হয়েই একদিন দীপক তার স্ত্রীকে ভুলিয়ে গাড়িতে করে নিয়ে গেলো আগে ভাগেই পরিকল্পনা করা ছিল নিজের গাড়ি দীপক স্বয়ং চালাচ্ছিল সে গাড়ি নিয়ে কিছু সময় ঘুরে অবশেষে সেই নবাবী বাংলোয় গিয়ে উঠলো

পুনমের সন্দেহ হয়নি সে নিশ্চিন্তে স্বামীর সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিল দীপক বলেছিল, পুনম চলো আমরা ভাড়ার ঘর দেখে আসি এবার থেকে আমরা আলাদা থাকবো, কেমন ?পুনম কিছুই ধারণা করতে পারেনি সে স্বামীর কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল দিনটা ছিল শনিবার বেলা এগারটায় ওরা ঘর দেখতে বেরিয়ে গেলো শহরের অনেক জাগা ঘুরে প্রায় সন্ধ্যের সময় সেই পুরানো ভূত বাংলোর কাছে এসে দীপক বলেছিল, চলো যাই দেখে আসি নবাবী ঐতিহাসিক ঘরটা কেমন ছিল ? ভূত বাংলোর ইমারত দেখে ভয় পেয়েছিলো পুনম--সে ভেতরে যেতে চায়নি  তবু দীপক তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ইমারতের ভেতর মহলে সেখানে গিয়ে দীপক তার সন্দেহের কথা পুনমকে জানাল কথায় কথায় একে অন্যের ওপরে রেগে গিয়েছিল এমনিতেই সময় সুযোগ খুঁজছিল দীপক সে তার পরিকল্পনা মত পকেটে করে নিয়ে আসা কাগজ কাটার চাকু বের করে নিয়েছিল আর সেই চাকু দিয়েই জোর জবরদস্তি পুঁছিয়ে পুঁছিয়ে পুনমের গলা কেটে ফেলেছিল, তারপর তার মাথা ভারী কোন জিনিস দিয়ে থেঁতলে দিয়েছিল পুনমকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল দীপক 

স্ত্রীকে হত্যা করে দীপক উন্মত্তের মত বাংলো থেকে বেরিয়ে আসে গাড়িতে উঠে সে সোজা দিয়ে পৌঁছায় স্থানীয় এলাকার থানা শাহজহাংনাবাদে থানায় দীপক তার অপরাধের কথা জানায়, সে যে তার স্ত্রীকে নির্মম ভাবে হ্যাঁ করেছে তা কবুল করে সে সময় নাকি দীপককে দেখে একজন স্বাভাবিক মানুষ বলেই মনে হচ্ছিল--তার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতার লক্ষণই ছিল না !

ঘটনার পর স্থানীয় মানুষরা আরও ভীত হয়ে পড়ে প্রায়ই গভীর রাতে নাকি নবাবী বাংলো বাড়ি থেকে কোন স্ত্রী কণ্ঠের মরণ আর্তনাদ বহুদূর পর্যন্ত ভেসে আসে লোকে বলে, সে ভেসে আসা চীৎকারের আওয়াজ নাকি দীপকের স্ত্রী, পুনমেরই !