গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৮

প্রদীপভূষণ রায়

রামকমলের গপ্পো

রামকমলের কথা বলতে গেলে শেষ হবে না । সে সময় ওকে চেনে না এমন কেউ বোধহয় আমাদের ওখানে ছিল না । ওর অদ্ভুত অদ্ভুত কান্ডের জন্য ও সবার কাছেই বেশ পরিচিত । কথায় কথায় ইউরেকা বলা ওর একটা বদ অভ্যাস ছিল তাই ক্লাসে আমরা ওকে আর্কিমিদিস বলে রাগানোর চেষ্টা করতাম । রামকমল কিন্তু মোটেই রাগ করত না । বরং বেশ খুশিই হত । অতবড় একজন বিজ্ঞানীর নামে ওকে ডাকা হচ্ছে এতে বোধহয় ওর আত্মতৃপ্তিও ছিল বেশ কিছুটা । রামকমলের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসায় সকলেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ত । স্কুলের মাষ্টারমশাই থেকে বন্ধুবান্ধব বাড়ির লোক এমনকি রাস্তার জন্তুজানোয়ারগুলো পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে থাকত । পড়াশুনায় খুব একটা খারাপ ছিল না । কৌতুহলই ওকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত ।
তখন পুরোনো কোর্সের হায়ার সেকেন্ডারি । ক্লাস নাইন থেকেই সায়েন্স আর্টস কমার্স ভাগ হয়ে যেত । নাইনে উঠে সায়েন্স নিল রামকমল । কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটারির দরজা প্রথম যেদিন আমাদের সামনে খুলে দিল সকলের মধ্যেই দারুন উত্তেজনা । রামকমল খুব গম্ভীরমুখে ল্যাবরেটারিতে ঢুকে ঘুরে ঘুরে টেষ্টটিউব নিয়ে র্যােকের ওপর রাখা নানান ধরনের বোতল থেকে কেমিক্যাল নিয়ে ঢালাঢালি করতে শুরু করে দিল । টেষ্টটিউবের মধ্যে কেমিক্যালের রঙ পাল্টানো দেখতে দেখতে রামকমলের চোখ দুটো যখন অবাক বিস্ময়ে চকচক করছে তখনই হঠাৎ দুম করে একটা আওয়াজ । দেখি রামকমলের হাতের টেষ্টটিউব ফেটে আগুন ধরে গেছে । ছেলেরা ভয় পেয়ে ততক্ষণে হইচই শুরু করে দিয়েছে । গোবিন্দ স্যার ছুটে এসেছেন । কোনওরকমে আগুন নিভিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পাওয়া গেল কিন্তু সেদিন প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে সারাক্ষণ রামকমলকে বাইরে নিলডাউন হয়ে থাকতে হল । এতেও ওর কৌতুহল একটুও কমেনি । বাড়িতে রেডিও বা টেপ খারাপ হলে আর দেখতে হবে না সঙ্গে সঙ্গে রামকমল স্ক্রু-ডাইভার নিয়ে বসে পড়ে । শেষ পর্যন্ত যেটা হয় টেপ বা রেডিও সারানো তো হয় না উপরন্তু কিছু স্ক্রু-নাটবল্টু এক্সট্রা হয়ে যায় । এ রহস্যও রামকমলকে ভাবিয়ে তোলে ।
একবার এক বন্ধু জগন্নাথের খেলতে গিয়ে হাত ভেঙ্গে যায় । অনেক বরফ-টরফ লাগিয়েও ব্যথা না কমায় সকলে ডাক্তারখানায় নিয়ে যায় জগন্নাথকে । রামকমলও সঙ্গে গিয়েছিল । ডাক্তারবাবু অনেক টিপে টুপে দেখে বললেন হাড় সরে গেছে সেট করতে হবে । জগন্নাথকে চেপে ধরে হাতটা বেশ কেমন ভাবে টেনে সেট করে দিলেন । একটা খট করে আওয়াজ হল আর জগন্নাথের ব্যথা সব হাওয়া হয়ে গেল । ব্যাপারটা রামকমলকে খুব আকৃষ্ট করেছিল । এটাই ও প্রয়োগ করতে গেল পাড়ার রাস্তার কুকুর ভুলুর ওপর । সেবার রিক্সার ধাক্কায় ভুলুর পায়ে চোট লাগে । ভুলু তো কেঁউ কেঁউ করে চেঁচাতেই থাকে । তখন বোধহয় দোকান যাচ্ছিল রামকমল । ভুলুর অবস্থা দেখে ধরেই নেয় নির্ঘাত পায়ের হাড় সরে গেছে । ডাক্তার কীভাবে হাড় সেট করেছে সেটা তো আগেই দেখেছে আর পায় কে ওকে । তখনই বসে যায় ভুলুর পায়ের হাড় সেট করতে । ভুলুকে চেপে ধরে ওর ঠ্যাং ধরে টান দিতেই ঘাবড়িয়ে গিয়ে ভুলু প্রচন্ড চিৎকার করে ওঠে তারপর মরিয়া হয়ে রামকমলের হাতে কামড় লাগিয়ে ছুটে পালায় । সে এক রক্তারক্তি কান্ড । সেবার রামকমলকে চোদ্দটা ইঞ্জেকশন নিতে হয়েছিল তলপেটে । এতেও ওর পরীক্ষা-নিরিক্ষা থামেনি উল্টে যেটা হল ভুলু আর রামকমলের ত্রিসীমানায় থাকে না । রামকমলকে দেখলেই পালায় ।
 
রামকমলকে দেখতে ছিল বেশ । ফর্সা গোলগাল বেঁটেখাটো চেহারা । চোখে মাইনাস পাওয়ারের চশমা কপালে কিন্তু সবসময়ই একটা চিন্তার ভাঁজ । ওর বাবা ছিলেন সরকারি অফিসের বড়বাবু । মাও কলকাতার কোন একটা অফিসে চাকরি করতেন । একছেলে বলে বাড়িতে আদর ছিল যথেষ্ট । দুষ্টু বুদ্ধিতেও কম ছিল না রামকমল ।
 
তখন সত্তরের দশক । চারিদিকে বোমাবাজি খুন-খারাপি চলছে । অনেক স্কুলেই পরীক্ষা ঠিকমত হচ্ছে না । এইরকম সময়ে হঠাৎ একদিন টিফিনের সময় ক্লাসে কেউ নেই ফাঁকা ঘর হঠাৎ প্রচন্ড জোরে আওয়াজ দুম । সারা স্কুলে হই-চই শুরু হয়ে গেল বোমা পড়েছে ! যে ঘরে আওয়াজ হয়েছে সবাই সেই দিকেই ছুটছে । হেডমাষ্টারমশাই থেকে হরিদা পর্যন্ত । দেখা গেল রামকমলদের ক্লাসের পেছনের বেঞ্চের তলা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে । চকলেট বোমের কিছু দড়ি কাগজের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে তার সঙ্গে পাওয়া গেল একটা পোড়া ধুপকাঠি । কে করেছে জানা গেল না । পরে আমরা জানতে পেরেছিলাম রামকমল সেদিন টিফিনে সবার শেষে ক্লাস থেকে বেরিয়েছে । হাতেনাতে কাউকে ধরতে না পেরে ক্লাসটা তিনদিন সাসপেন্ড হয়ে গেল । পরে অবশ্য রামকমল আমাদের কাছে স্বীকার করেছিল কান্ডটা ওই ঘটিয়েছিল । ও টাইমবোমার পরীক্ষা করেছিল সেদিন ।
রামকমল ছেলে হিসেবে খুবই ভালো কিন্তু ওর কৌতুহল আর পরীক্ষানিরীক্ষার ঠেলায় সবাই বিব্রত । একবার ওর বাবা গ্লোব নার্সারি থেকে একটা গোলাপের চারা এনে লাগিয়েছিলেন টবে । গাছটা ঠিকমত বাড়ছিল না । রামকমলের বাবার শরীরটাও ভালো যাচ্ছিল না । খিদে নেই ,শরীরে একদম জোর পাচ্ছিলেন না । ডাক্তারবাবু একটা টনিক দিয়েছিলেন দিনে দুবার করে খেতে হবে । একদিন টনিকটা খেতে গিয়ে দেখেন বোতলটা খালি । খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সেদিন । তখনও অর্ধেকটার ওপর থাকার কথা । রামকমলকে চেপে ধরতেই ও গড়গড় করে বলে ফেলল গোলাপ গাছটার গ্রোথ হচ্ছে না দেখে টনিকটা গাছের গোড়ায় ঢেলে দিয়েছে । যদি টনিকে কিছু কাজ দেয় । রামকমলের বাবা হাসবেন না রাগ করবেন ভেবেই পেলেন না । অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে ।
রামকমলের প্রশ্নের ঠেলায় ক্লাসে মাষ্টারমশাইরাও খুব অস্বস্তিতে পড়তেন মাঝে মাঝে । তাতেও কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না রামকমলের । সেবার যেমন রাঘববাবু আমাদের বায়োলজি পড়াচ্ছেন । হঠাৎ রামকমলের প্রশ্ন আচ্ছা স্যার আজকাল তো অনেক হাইব্রিড পশু জন্মাচ্ছে । যেমন চিড়িয়াখানায় বাঘ আর সিংহের বাচ্ছা বাংহ জন্মালো এইরকম উদ্ভিদ জগতে ঘটানো যায় না ? বেশ এইরকম কোনও গাছ হল যার ফলটা আমের মত কিন্তু স্বাদটা কাঁঠালের মত । বা ধরুন ফলটা কাঁঠালের মত কিন্তু কোয়াগুলোর স্বাদ হিমসাগর আমের মত ।
রাঘববাবুর দশাসই চেহারা ,হাই পাওয়ারের চশমার ভেতর দিয়ে চোখদুটো বড় বড় গোলার মত লাগে।
রামকমলের প্রশ্ন শুনে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে রামকমলের কানটা ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে ক্লাসের বাইরে একপায়ে দাঁড় করিয়ে রাখলেন সমস্ত পিরিয়ডটা ।
 
এহেন রামকমলের মাথায় কিছুদিন ধরেই গোয়েন্দাপোকা নড়াচড়া করছিল । আমাদের স্কুলের পাশেই যে পাবলিক লাইব্রেরী আছে সেখানে সনাতনদা আর পাঁচুদার কাছ থেকে খবর পেলাম কিছুদিন ধরেই রামকমল কিরীটী , ব্যোমকেশ ,আর ফেলুদা ছাড়া অন্য কোনও গল্পের বই নিচ্ছে না । রিডিং রুমের কার্ডেও আগাথা ক্রিস্টির আরকুল পোয়ারোকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে । সনাতনদা আর পাঁচুদা লাইব্রেরীতে চাকরি করেন । আমাদের স্কুলের ছাত্রদের অধিকাংশেরই ফ্রি রিডিং কার্ড আছে । তাই আমাদের প্রায় সকলকেই খুব ভালো করে চেনেন বিশেষ করে রামকমলের সব পাগলামি সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল । ওনাদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম রামকমলের গোয়েন্দাপ্রীতির কথা । কিছুদিন ধরেই ওর চালচলন কেমন অন্যরকম লাগছিল । এখন নিশ্চিন্ত হলাম ।
একদিন পিন্টু পেনসিল বক্সে ওর পেনসিলটা খুঁজে পাচ্ছিল না । কোথা থেকে রামকমল এসে পকেট থেকে একটা ঢাউস ম্যাগনিফাইং গ্লাস বার করে পিন্টুর পেনসিল বক্সটা ছোঁ মেরে টেনে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল । আমরা জিজ্ঞেস করাতে গম্ভীরভাবে উত্তর দিল চোরের হাতের ছাপ পরীক্ষা করছি । এরপর তোদের হাতের ছাপ পরীক্ষা করব তাহলেই ধরা পড়বে কে ওর পেনসিল নিয়েছে ।রনেন ওর মাথায় খুব জোরে একটা গাঁট্টা বসিয়ে দিয়ে বলে তোর মাথা ফাটিয়ে গোয়েন্দাপোকা বার করছি ।আমরা তো কোনওরকমে ওদের থামালাম পরে দেখা গেল পিন্টুর ব্যাগের মধ্যেই পেনসিল রয়ে গেছে ।
 
ওর গোয়েন্দা হবার খ্যাপামিটা বেড়ে উঠল ওর মেসো ওকে একটা দামি বাইনোকুলার উপহার দেবার পর । আমাদের নিচের ক্লাসের পল্টাকে ওর এ্যাসিস্ট্যান্ট বানিয়ে নিয়ে চারপাশের রহস্যের সমাধান খুঁজে বেড়ায় । অধিকাংশ সময়ে দুজনকে একসাথে ঘুরতে দেখা যায় । এর কিছুদিন পর দুজনে একটা কান্ড ঘটাল । ব্যাপারটা আর কিছুই নয় , পাড়ার খেন্তিপিসির পাঁঠাটাকে দুদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । পিসি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল । চারিদিকে খুব খোঁজাখুঁজি করেও পাঁঠাটাকে না পেয়ে পিসি যখন খুব হতাশ তখন রামকমল নিজেই এগিয়ে গেল সাহায্যের জন্য । বলল পিসি তুমি চিন্তা কোরো না । এখন বাড়ি চলে যাও আমরা দুজনে ঠিক খুঁজে বার করে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব ।পিসিকে নিশ্চিন্ত করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে রামকমল পল্টাকে নিয়ে তদন্ত শুরু করে দিল । সেদিন আবার ক্লাবের মাঠে পিকনিক ছিল । ওদের সন্দেহ গিয়ে পড়ল ক্লাবের ছেলেদের ওপর । ভেবেছে ওরাই পাঁঠাটা চুরি করেছে পিকনিকের জন্য । পল্টাকে লাগিয়ে দিল ক্লাবের ছেলেদের পেছনে । ওরা কী করছে কোথায় যাচ্ছে সব জানার জন্য । নিজে একটা ঢিপির আড়াল থেকে বাইনোকুলার দিয়ে লক্ষ্য করতে লাগল ওদের রান্নার জায়গা । একটা ঠাকুর রান্না করছিল । রামকমলের নজর ছিল মাংসের হাঁড়ির ওপর । ঠাকুরটা একটা বড় হাঁড়িতে মাংস রেখেছিল । ঠাকুরটা যেই একটু অন্যদিকে গেছে রামকমল গিয়ে রামকমল গিয়ে হাঁড়ির ঢাকনা খুলে হাতায় করে খানিকটা মাংস তুলে নিয়ে দেখে পাঁঠার নয় মুরগির মাংস । এদিকে ক্লাবের একটা ছেলে ততক্ষণে রামকমলকে দেখে ফেলেছে । দূর থেকে ভেবেছে কে না কে এসে মাংস তুলে নিচ্ছে । ছেলেটা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয় । হই হই করে ক্লাবের ছেলেরা দৌড়ে আসে । ক্লাবের ছেলেদের ওই ভাবে আসতে দেখে ভয় পেয়ে রামকমল পাশের পানাপুকুরে ঝাঁপ দেয় । সমস্ত মাথা ভর্তি পানা ,হাতে পায়ে পাঁক মাখামাখি সে এক বিদিগিচ্ছিরি অবস্থা । ওকে চিনতে পেরে সব কথা শুনে সবাই হেসেই অস্থির । পরে জানা গেল পাশের পাড়ায় একজনের বাগানে পাঁঠাটা ঢুকে বাগানের সব গাছ মুড়িয়ে খেয়েছে । সেই জন্য যার বাগান সেই ভদ্রলোক পাঁঠাটাকে খোঁয়াড়ে দিয়ে এসেছে । খেন্তিপিসি পরে গিয়ে পাঁঠাটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে ।
 
একবার তো ওর নামে স্কুলে পোষ্টার পড়ে গেল রামকমল কুন্ডু চিবিয়ে খাব মুন্ডু ।ব্যাপারটা আর কিছুই নয় । সেবার স্কুলে ইন্টার-ক্লাশ ফুটবল টুর্ণামেন্টের খেলা । আর্টসের ছেলেদের সঙ্গে আমাদের সায়েন্সের সেমিফাইনাল । আর্টসের ছেলেদের ফুটবল টিম খুবই স্ট্রং । ওদের থেকেই বেশির ভাগ ছেলে স্কুলটিমে চান্স পায় । হাফটাইমের আগেই আমাদের ক্লাস তিনগোল খেয়ে গেল । সবাইকার মুখ শুকিয়ে গেছে । হাফডজন গোল খেলে আর আমরা স্কুলে মুখ দেখাতে পারব না । আমরা রামকমলকে বললাম আর্কিমিদিস কিছু একটা করে দেখা , মান সম্মান তো আর থাকবে না ।রামকমল খানিকক্ষণ কী যেন ভাবল তারপর দেখছি বলে উঠে চলে গেল । একটু বাদেই ফিরে এল , চোখ টিপে বলল কাজ হয়ে গেছে ।কী করেছে কিছুই বুঝলাম না । হাফটাইমের বিরতিতে দেখলাম গোবেচারার মত বসে বসে বাদাম চিবোচ্ছে । খেলটা দেখলাম দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হবার দশ মিনিটের মধ্যে । হঠাৎ দেখি আর্টসের গোলকিপার বল ধরেই পেট চিপে বসে পড়ল । সবাই তো অবাক , কী ব্যাপার ! দেখতে দেখতে ওদের সব প্লেয়ারেরই পেট ব্যাথা শুরু হয়ে গেল । সে এক বিদিগিচ্ছিরি অবস্থা । বল ধরতে গিয়ে সব বসে পড়ছে আর সেই সুযোগে আমাদের ছেলেরা বল নিয়ে গোল শোধ করে দিয়ে আসছে । এক সময় আমরা এগিয়ে গেলাম শেষে এমন অবস্থা হল আর্টসের ছেলেরা আর খেলতেই পারল না । সব দৌড় লাগাল মাঠের পাশের জঙ্গলের দিকে । পরে জেনেছিলাম হাফটাইমের ঠিক আগে হরিদা যখন প্লেয়ারদের জন্য নুন চিনির জল ,বরফ , লেবু সব আলাদা করে রাখছিল তখন রামকমল কয়েকটা ছেলেকে নিয়ে হরিদার কাছে গিয়েছিল । হরিদাকে শুধু বলেছিল এক্ষুনি হাফটাইম হবে আমাদের ক্লাসের ছেলেদের জল বরফ সব আমাদের দিয়ে দাও ।হরিদা যখন জল বরফ দিতে ব্যস্ত সে সময় রামকমল কড়া ডোজের জোলাপ গোছের কিছু ওদের জলে মিশিয়ে দিয়েছিল । তাতেই এই বিপত্তি । রামকমল অবশ্য ধরা পড়েনি তবে কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাপারটা কেমন ভাবে যেন জানাজানি হয়ে যায় । স্কুলের সমস্ত দেওয়ালে পোষ্টার পড়ে যায় রামকমল কুন্ডু চিবিয়ে খাব মুন্ডু ।কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই যা হবার তা হয়ে গেছে । আমরা ফাইনালে পৌঁছে গেছি । মাঝখান থেকে রামকমলের সাতদিন স্কুলে আসা বন্ধ হল ।
 
আমাদের ওখানে হঠাৎ একবার খুব চুরির উপদ্রব শুরু হল । প্রায় দিনই কোনও না কোনও বাড়িতে চোর ঢুকেছে শোনা যাচ্ছিল তার সঙ্গে আবার তার কাটার উপদ্রব । তখন রাস্তার দুই পোস্টে তামার তার লাগান থাকত । অদ্ভুতভাবে এই তার চুরি হত । যারা চুরি করত তাদের দক্ষতা দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয় । একটু এদিক ওদিক হলেই মৃত্যু । রাত দেড়টা দুটো নাগাদ ভুলুর চিৎকারে বুঝতে পারতাম লোক এসেছে । ওরা ভুলুকে মেরে ফেলার জন্য বিষ মেশান খাবার দিয়েছে কিন্তু রাস্তার নেড়ি কুকুর ভুলু ওদের খাবার ছুঁয়েও দেখেনি । বড় পাথর ছুঁড়ে ওরা ভুলুর একটা পা জখম করে দিয়েছিল । পুলিশকে বারবার জানানো সত্ত্বেও কখনই কোনও রাত্রে পুলিশি টহল দেখিনি । একবার উল্টোদিকের বাড়ির শানু মুখুজ্জে দেখে ফেলে চিৎকার করেছিল ওরা সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে । ভাগ্য ভালো কারও লাগেনি । বাড়ির দেওয়ালে বোমা আছড়ে পড়েছিল । প্রচন্ড আওয়াজে পাড়ার সব লোক জেগে যায় । চারদিকে হই চই শুরু হয়ে যাওয়ায় ওরা পালিয়ে যায় বটে কিন্তু একটা আতঙ্কের ছাপ রেখে যায় । এরপর থেকে কেউ আর ওদের ঘাঁটাতে সাহস করেনি । পরদিন সকালে পুলিশ আসে কিন্তু ওই আসাটাই সার । কোনও কাজই হয়নি এতে । আজ এখানে কাল ওখানে তার কাটা চলতেই থাকে । ওদের কাজের ধরনটাই ছিল আলাদা । বেশ কয়েকজন মিলে একটা নির্দিষ্ট ছকে কাজটা করত।
একদিন রাত্রে ভুলুর চিৎকারে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল । বুঝতে পারি কিছু একটা গড়বড় হতে যাচ্ছে । যে ঘরে শুতাম সেটা দোতলার রাস্তার দিকে । জানালা দিয়ে রাস্তার সব দেখা যায় । হঠাৎ দেখি দুটো ছেলে রাস্তার এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে চলে গেল । মিনিট সাত আট পরে আবার দেখি দুটো ছেলে এসে তরতর করে দুটো লাইটপোস্ট বেয়ে উঠে গেল । তারপর ঝপাৎ করে একটা আওয়াজ সঙ্গে সঙ্গে আলো নিভে গিয়ে পাখা-টাখা সব বন্ধ । রাস্তা অন্ধকার কিন্তু জ্যোৎস্নার আলোয় সবকিছু পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে । দেখলাম ছেলে দুটো লাইটপোস্ট বেয়ে তাড়াতাড়ি নেমে চলে গেল । মিনিট সাত আট বাদে আরও দুটো ছেলে এসে তারটা গুটিয়ে নিয়ে হাওয়া । এত দ্রুত ঘটনাটা ঘটে গেল ভাবলে বেশ অবাক হয়ে যেতে হয় । সমস্ত এলাকাটা নিস্তব্ধ শুধু ভুলু চিৎকার করে পাড়া ফাটিয়ে দিচ্ছে তখন ।
একদিন তো আমাদের পাশের বাড়িতে চুরি হয়ে গেল । নাতির অন্নপ্রাশনের জন্য সন্ধ্যাদির বাবা সোনার হার বালা সব তৈরি করিয়েছিলেন । কী যে করল বোঝা গেল না বাড়িতে কেউ একেবারে টেরই পেল না । টাকা-পয়সা গয়না-গাটি সব হাওয়া । সবাই বলে ওরা নাকি স্প্রে করে বাড়িতে ঢুকেছিল । এইরকম যখন অবস্থা পাড়ায় অচেনা লোক দেখলেই সন্দেহ হয় । বাড়ির পাশেই ছিল রবীনদার বাগান । গাছগাছালিতে ভর্তি । রোজ রাতের বেলা ভুলু বারবার বাগানের দিকে ছুটে যায় বোঝা যায় বাগানে নিশ্চই কেউ ঢুকেছে । আমরা রামকমলকে ঠাট্টা করে বলি তুই থাকতে চোর ধরা পড়ছে না ! কিছু একটা কর ।রামকমল কিছু বলে না চুপ করে থাকে । একদিন সন্ধেবেলা খুব চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বেরিয়ে দেখি রামকমল আর পল্টা আমাদেরই বয়েসি একটা ছেলেকে ধরে খুব হম্বিতম্বি করছে । ওদের চিৎকার চেঁচামেচিতে বেশ কিছু লোকজনও জড়ো হয়ে গেছে । ছেলেটার হাতে একটা চটের বস্তা , মনে হল বস্তার মধ্যে কিছু একটা আছে । ছেলেটাকে চিনি , রেললাইনের পাশের বস্তিতে থাকে । রামকমল আর পল্টা বস্তা ধরে টানাটানি করছে ছেলেটাও দেবে না । ওদের হম্বিতম্বি চিৎকার বল কী চুরি করেছিস ?’ ছেলেটাও বারবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বলছে আমি চোর নয় , সত্যি বলছি কিছু চুরি করিনি ।
- তাহলে বাগানে ঢুকতে যাচ্ছিলি কেন ? নিশ্চই ওখান দিয়ে পালাবার মতলব করছিলি । শিগগির বস্তা খোল দেখব বস্তায় কী আছে । রামকমল খুব গম্ভীরভাবে বলে ওঠে ।
 
এইসব উত্তেজনায় কেউ খেয়াল করেনি বস্তাটা নড়াচড়া করছে । হঠাৎ ম্যাও আওয়াজ । বস্তাটা খুলতেই চারটে বেড়ালছানা বেরিয়ে পড়ে । আসলে ছেলেটা যে বাড়িতে কাজ করে সেই বাড়িতেই বাচ্চাগুলো হয়েছে । বাড়ির কর্তার কথায় ও বাচ্চাগুলোকে বাগানে ফেলতে এসেছে । বেড়াল বাচ্চাগুলো খুব সুন্দর দেখলেই মায়া হয় । বাগানে শেয়াল কুকুরে হয়তো মেরেই ফেলবে । দেখা গেল বাচ্চাগুলোর ভাগ্য ভালো । সবকটা বাচ্চাই কারো না কারো বাড়িতে আশ্রয় পেয়ে গেল । রামকমলও নিল একটাকে।
 
রামকমল কিন্তু সত্যি সত্যিই একদিন চোর ধরল । চোরের উপদ্রবে নাজেহাল হয়ে পাড়ার শীতলা মন্দিরের আটচালায় মিটিং বসল । সিধু জ্যাঠা হলেন কনভেনার । মিটিংয়ে ঠিক হল ডিফেন্স পার্টি তৈরি হবে । থানার ওসিও এসেছিলেন সেই মিটিংয়ে । উনি বললেন ওনাদের ফোর্স এত কম তারওপর এলাকাটা এত বড় যে টহল দিয়ে ঠিক সামাল দেওয়া যায় না । থানা থেকে ডিফেন্স পার্টির জন্য ব্যাজ লাঠি বাঁশি আর দুটো চার ব্যাটারির টর্চ দেওয়া হল । চাঁদা তুলে আরও কয়েকটা টর্চ ,ব্যাটারি,রাতের জন্য চা,চিনি,দুধ, কেটলি স্টোভ সব কেনা হল । ঠিক হল প্রত্যেক বাড়ি থেকে একজনকে সপ্তাহে অন্তত একদিন ডিফেন্স পার্টির ডিউটি দিতে হবে । এতে আমাদের বয়সি ছেলেদেরই উৎসাহ বেশি তার মধ্যে রামকমলের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত ।
 
রামকমল যে রাতে থাকত সে রাতে একটা বাঁশি আর টর্চ নিজের কাছে রেখে দিত । খুব মজার মজার ঘটনাও ঘটত ডিফেন্স পার্টির পাহারা দেওয়ার সময় । কুঞ্জকাকু খুব ভিতু প্রকৃতির মানুষ । একদিন পাহারা দেওয়ার সময় জ্যোৎস্না রাতের আলো-আঁধারিতে কিছু দেখে ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় এক অদ্ভুত স্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন এই কে ওখানে ? কথা বলছ না কেন ?’ রামকমল কাছেই ছিল সঙ্গে সঙ্গে বাঁশি বাজিয়ে দিয়েছে । সবাই ছুটে আসে । দেখা গেল একটা কলাগাছকে আলো-আঁধারিতে মানুষ বলে ভুল করেছেন কুঞ্জকাকু । আর একদিন কুকুরের চিৎকার শুনে শর্টকাট করে নিতাইদাদের ছোটো তিনফুটের পাঁচিল টপকাতে গিয়ে রামকমল পড়ল কাঁচা নর্দমায় । সারাগায়ে দুর্গন্ধময় নোংরা পাঁকে মাখামাখি । উৎসাহের চোটে ওর খেয়ালই ছিল না পাঁচিলের পাশেই রয়েছে নর্দমা । আলো-ছায়ার খেলায় মাঠ আর নর্দমা তখন একাকার । এইরকম কিছুদিন চলার পর চুরির উপদ্রব অনেকটাই কমে গেল । ক্রমশ উৎসাহে শুরু হল ভাঁটার টান । মাঝে মাঝেই লোক কমছে কিন্তু রামকমলের উৎসাহে খামতি নেই । নিয়মিত পাহারা দিয়ে চলে । একদিন তখন বোধহয় রাত দুটো হবে ,সবাই আটচালাতে বসে চা খাচ্ছি হঠাৎ আমাদের বাড়ির পেছন দিক থেকে ভুলুর প্রচন্ড চিৎকার ভেসে এল । সবাই ছুটলাম , রামকমল পল্টা আমি আরও দু-একজন রবীনদার বাগানে ঢুকলাম বাকিরা ছুটল যেদিক থেকে ভুলুর আওয়াজ আসছে সেইদিকে । রামকমল আর পল্টা টর্চ মেরে দেখতে দেখতে বাগানের পশ্চিমদিকের ঝোপের দিকে এগিয়ে গেল । আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে লক্ষ্য রাখছি চারদিক । হঠাৎ রামকমলের চিৎকার ইউরেকা পেয়ে গেছি সঙ্গে সঙ্গে বাঁশির আওয়াজ । সে এক হইহই কান্ড । আমরা সবাই ততক্ষণে পৌঁছে গেছি । দেখলাম ঝোপের মধ্যে খানিকটা জায়গা পরিস্কার করা সেখানে আপাদমস্তক চাপা দিয়ে একটা লোক বসে রয়েছে । লোকটা পালাতে গিয়েছিল কিন্তু আমরা সবাই এসে পড়াতে আর পালাতে পারেনি । প্রথমে কিছুতেই কিছু স্বীকার করে না তারপর কয়েক ঘা ডান্ডার বারি পিঠে পড়তেই সব গড়গড় করে বলে গেল । ওরা নাকি চারজন ছিল । ওর কাজ ছিল মাঠের মধ্যে বসে চারদিক নজর রাখা আর বিপদ বুঝলেই সংকেত পাঠিয়ে সঙ্গীদের সাবধান করে দেওয়া । কিন্তু মাঠের মধ্যে বসে বসে ওর কেমন যেন ঝিমুনি এসে যায় । সবে যখন দুচোখের পাতা একটু বুঁজে এসেছে সেই সময় রামকমলের চিৎকারে চোখ খুলেই রামকমল আর পল্টাকে দেখে ঘাবড়ে যায় তারপর আমরা এসে পড়াতে আর পালাতে পারেনি । ও দিনের বেলা ট্রেনে ঝালমুড়ি বিক্রি করে সন্ধেবেলা সিনেমার টিকিট ব্ল্যাক করে আর রাতে চুরি । বাকি রাতটা ওকে নিয়েই কেটে গেল । সারা পাড়া জেগে গেছে আর রামকমল হিরো হয়ে গেল । থানায় খবর দেওয়াতে ওসি সাহেব নিজেই এলেন আর রামকমলের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন সাবাস বাচ্চা ।
দেখি রামকমলের মুখটা আরও গম্ভীর হয়ে কপালের ভাঁজটা বাড়িয়ে দিল । মাসখানেক বাদে একদিন ক্লাসে এসে চুপিচুপি আমায় বলল জানিস মামার বাড়ি গিয়েছিলাম দেখি ট্রেনে ওই চোরটা ঝালমুড়ি বিক্রি করছে ।
- তোকে চিনতে পারেনি ?
- হ্যাঁ রে , কটমট করে তাকাচ্ছিল আমার দিকে ।
পরে দেখলাম ট্রেনে উঠতে রামকমলের অ্যালার্জি এসে যাচ্ছে ।
এমন খেয়ালি ছেলে খুব কমই দেখেছি , বুঝে উঠতে পারি না ওকে । সেবার বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষ্যে স্কুলে একটা অনুষ্ঠান হবে । সাধারণত স্কুল চলাকালীন এইসব অনুষ্ঠানগুলো হত । দু-তিনটে পিরিয়ডের পর সবাই হলঘরে জমায়েত হতাম । সব মাস্টারমশাইরা থাকতেন । আবৃত্তি বক্তৃতা গান এইসব হত । উৎসাহী ছাত্ররা আগে থেকে নাম দিত অংশগ্রহণ করার জন্য । মাস্টারমশাইরাও কেউ কেউ অংশগ্রহণ করতেন । সেবার আমাদের বাংলার মাস্টারমশাই অমলবাবু , সুখরঞ্জন আর রামকমলের নাম ঢুকিয়ে দিলেন । ওদের বললেন বিবেকানন্দ সম্পর্কে কিছু কথা বলতে হবে । সুখরঞ্জনের কোনও অসুবিধা ছিল না ও বহুবার নানান জায়গায় নানান ডিবেটে অংশগ্রহণ করে অনেক পুরস্কার জিতেছে । রামকমল কিন্তু কখনই স্টেজে ওঠেনি । তাই অমলবাবুর কথায় দেখলাম ওর কপালের ভাঁজটা লম্বা হয়ে গেছে । টিফিনের সময় রামকমল হঠাৎ বলে উঠল ইউরেকা রাস্তা পেয়ে গেছি ।প্রথমে বুঝতে পারিনি কিসের রাস্তার কথা বলছে পরে জিজ্ঞেস করতেই বলল , ‘ বিবেকানন্দ সম্পর্কে বলতে হবে না !বুঝলাম চার পিরিয়ড ধরে এটাই ওর মাথায় ঘুরছিল । বলল, ‘লাইব্রেরীতে যাচ্ছি বিবেকানন্দের জীবনী বিষয়ক বইগুলো একটু ভালো করে নেড়েচেড়ে নিতে হবে তাহলেই হবে ।
 
অনুষ্ঠানের দিন আমরা সবাই হলঘরে হাজির । সমস্ত মাস্টারমশাইরাও এসে গেছেন । হেডমাস্টারমশাই বিবেকানন্দের জীবন আর আদর্শ সম্পর্কে বলে অনুষ্ঠান শুরু করলেন । ক্লাস সেভেনের একটা ছেলে রবীন্দ্রনাথের গান গাইল । দারুন গেয়েছিল । আমরা সবাই খুব হাততালি দিলাম । সুখরঞ্জনও খুব সুন্দর বলল । অবশেষে এল রামকমলের ডাক । দেখলাম হরিদার কাছ থেকে দুগ্লাস জল চেয়ে খেল বুঝলাম বেশ নার্ভাস । গম্ভীরভাবে স্টেজে উঠে মাইক্রোফোনের ওপর দুচারবার টোকা মেরে শুরু করল উনবিংশ শতাব্দীতে যে সব মহামনীষী জন্মগ্রহণ করে ভারতবর্ষের নাম বিশ্বজগতের সামনে উজ্জ্বল করে তুলে ধরেছেন বিবেকানন্দ তাদের মধ্যে অন্যতম । শুরুটা বেশ করেছিল মনে হচ্ছিল একটা রচনা মুখস্ত করে এসেছে । হঠাৎই তাল কেটে গেল মনে হল ভুলে গেছে।
কেননা একটা লাইন দুবার করে বলে হঠাৎ থেমে গেল । তারপর এখন নয় পরে বলব বলে গটগট করে স্টেজ থেকে নেমে গেল ।